টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলায় ২৮২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৯টির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন রয়েছে
টাঙ্গাইলে ফসলি জমির মাটি দিয়ে অবৈধ ইটভাটায় ইট তৈরি হচ্ছে, বাড়ছে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা ঢাকা ট্রিবিউন
আব্দুল্লাহ আল নোমান, টাঙ্গাইল
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৪১ পিএমআপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ১০:২৬ পিএম
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে টাঙ্গাইলে বেড়ে চলেছে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জেলায় বর্তমানে বৈধের তুলনায় অবৈধ ইটভাটার সংখ্যাই বেশি।
আর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া অনেক ইটভাটাই আইন না মানলেও অনুমতি পেয়েছে বলে পরিবেশবাদীদের অভিযোগ।
দেখা গেছে, ইটভাটাগুলোর বেশিরভাগ কৃষি জমি, বসতবাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অবস্থিত। এত পরিমাণ ইটভাটা কীভাবে লাইসেন্স বা পরিবেশ আইনের ছাড়পত্র পেলো সেই প্রশ্ন সাধারণ জনগণের।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলায় ২৮২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৯টির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন রয়েছে, বাকি ১৫৩টি ইটভাটার ছাড়পত্র নেই।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারি করা ১৯৯২ সালের প্রজ্ঞাপনে কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এসব ভাটায় কৃষিজমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি) ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।
এছাড়া, বেশির ভাগ ইটভাটায় কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর ইট তৈরির মৌসুমকে ঘিরে ভাটাগুলোতে মজুত করা হয়েছে বিশালকৃতি মাটির স্তূপ। এতে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত এসব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সদুল্যাপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কৃষি জমিতে একই জায়গায় পাশাপাশি গড়ে উঠেছে চারটি ইটভাটা। যেখানে বসতবাড়ির পাশাপাশি রয়েছে বাজার ও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় চারটি ইটভাটা রয়েছে। এর ফলে জমিতে আর আগের মতো ফসল হচ্ছে না।
স্থানীয় সোবহান জানান, এই ইটভাটার কারণে এখন আর গাছে ফল থাকে না। একটু বড় হলেই নারকেলের মতো ফল ফেটে ঝরে যায়। আম, কাঁঠালসহ অধিকাংশ ফলের ফলনই কমে গেছে।
একই এলাকার হাসান ফকির নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, “ভাটার ধোঁয়ায় আমাদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। ফসলের ফলন কমে গেছে। এ বিষয়ে অনেক জায়গায় কথা বলেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।”
একই চিত্র জেলার প্রায় সর্বত্র। সখিপুর উপজেলার পলাশতলি এলাকার মিতালি ইটভাটা পলাশতলি মহাবিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত। ভাটার ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের শব্দে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার বলেন, “ইটভাটার শব্দে পড়ালেখা করা যায় না। তার ওপর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ক্লাসে বসে থাকা যায় না। একদিন ক্লাসে এলে পরের দিন মাথা ব্যথায় আর আসা যায় না।”
এ ব্যাপারে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী এ এস এম সাইফুল্লাহ বলেন, “জমির ওপরের ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি মাটি বেশি উর্বর থাকে। যা ফসল উৎপাদনে খুবই সহায়ক। কৃষকদের অস্বচ্ছলতার সুযোগে ইটভাটা মালিকরা অর্থের লোভ দেখিয়ে জমির টপ সয়েল কিনছেন। ভাটায় প্রতি বছর টপ সয়েল ব্যবহার করায় জমির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এতে কৃষকরাও জমিতে সারের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এভাবে টপ সয়েল তুলে নেওয়া অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমিগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন করায় পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। আমরা কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এ সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।”
টাঙ্গাইল জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, “আমরাও চাই অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হোক, সে কারণে আমরা ভাটা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।”
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “গত বছর আমরা অনেকগুলো ইটভাটাকে জরিমানা করেছি, এ বছরও আমাদের অভিযান চলবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। যেসব ইটভাটা বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে আছে সেগুলোর ছাড়পত্রও বাতিল করা হবে।”
অবৈধ ইটভাটায় বিষাক্ত হয়ে উঠছে টাঙ্গাইলের পরিবেশ
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলায় ২৮২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৯টির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন রয়েছে
নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে টাঙ্গাইলে বেড়ে চলেছে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জেলায় বর্তমানে বৈধের তুলনায় অবৈধ ইটভাটার সংখ্যাই বেশি।
আর পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাওয়া অনেক ইটভাটাই আইন না মানলেও অনুমতি পেয়েছে বলে পরিবেশবাদীদের অভিযোগ।
দেখা গেছে, ইটভাটাগুলোর বেশিরভাগ কৃষি জমি, বসতবাড়ি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অবস্থিত। এত পরিমাণ ইটভাটা কীভাবে লাইসেন্স বা পরিবেশ আইনের ছাড়পত্র পেলো সেই প্রশ্ন সাধারণ জনগণের।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে জেলায় ২৮২টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১২৯টির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন রয়েছে, বাকি ১৫৩টি ইটভাটার ছাড়পত্র নেই।
অভিযোগ রয়েছে, ছাড়পত্র পাওয়া অনেক ইটভাটার ক্ষেত্রেই যথাযথ নিয়ম মানা হয়নি।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারি করা ১৯৯২ সালের প্রজ্ঞাপনে কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এসব ভাটায় কৃষিজমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি) ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।
এছাড়া, বেশির ভাগ ইটভাটায় কয়লার বদলে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর ইট তৈরির মৌসুমকে ঘিরে ভাটাগুলোতে মজুত করা হয়েছে বিশালকৃতি মাটির স্তূপ। এতে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত এসব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সদুল্যাপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কৃষি জমিতে একই জায়গায় পাশাপাশি গড়ে উঠেছে চারটি ইটভাটা। যেখানে বসতবাড়ির পাশাপাশি রয়েছে বাজার ও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় চারটি ইটভাটা রয়েছে। এর ফলে জমিতে আর আগের মতো ফসল হচ্ছে না।
স্থানীয় সোবহান জানান, এই ইটভাটার কারণে এখন আর গাছে ফল থাকে না। একটু বড় হলেই নারকেলের মতো ফল ফেটে ঝরে যায়। আম, কাঁঠালসহ অধিকাংশ ফলের ফলনই কমে গেছে।
একই এলাকার হাসান ফকির নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, “ভাটার ধোঁয়ায় আমাদের শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। ফসলের ফলন কমে গেছে। এ বিষয়ে অনেক জায়গায় কথা বলেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।”
একই চিত্র জেলার প্রায় সর্বত্র। সখিপুর উপজেলার পলাশতলি এলাকার মিতালি ইটভাটা পলাশতলি মহাবিদ্যালয়ের পাশেই অবস্থিত। ভাটার ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনের শব্দে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদনী আক্তার বলেন, “ইটভাটার শব্দে পড়ালেখা করা যায় না। তার ওপর বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় ক্লাসে বসে থাকা যায় না। একদিন ক্লাসে এলে পরের দিন মাথা ব্যথায় আর আসা যায় না।”
এ ব্যাপারে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবেশ বিজ্ঞানী এ এস এম সাইফুল্লাহ বলেন, “জমির ওপরের ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি মাটি বেশি উর্বর থাকে। যা ফসল উৎপাদনে খুবই সহায়ক। কৃষকদের অস্বচ্ছলতার সুযোগে ইটভাটা মালিকরা অর্থের লোভ দেখিয়ে জমির টপ সয়েল কিনছেন। ভাটায় প্রতি বছর টপ সয়েল ব্যবহার করায় জমির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এতে কৃষকরাও জমিতে সারের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এভাবে টপ সয়েল তুলে নেওয়া অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমিগুলো পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপন করায় পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। আমরা কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করছি কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত এ সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখবে।”
টাঙ্গাইল জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, “আমরাও চাই অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হোক, সে কারণে আমরা ভাটা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।”
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “গত বছর আমরা অনেকগুলো ইটভাটাকে জরিমানা করেছি, এ বছরও আমাদের অভিযান চলবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশের এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। যেসব ইটভাটা বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে আছে সেগুলোর ছাড়পত্রও বাতিল করা হবে।”