আসামি ধরার জন্য আত্মগোপনে গিয়ে বা নকল পরিচয়ে ঘুরছেন পুলিশ কর্মকর্তা এমন ঘটনা চলচ্চিত্র বা নাটকে প্রতিনিয়ত দেখা গেলেও বাস্তবে কমই ঘটে। তবে, এমনই এক পুলিশ কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে।
সম্প্রতি যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল আল আজাদ লেগুনাচালকের সহকারী সেজে একটি হত্যা মামলার আসামি ধরে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম নিউজবাংলা ২৪-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২২ জানুয়ারি ভোরে যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে মহির উদ্দিন নামে এক মাছ ব্যবসায়ীকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে, ২৩ জানুয়ারি রাতে ওই মাছ ব্যবসায়ীর ছেলে খাইরুল ইসলাম যাত্রাবাড়ী থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই বিল্লাল আল আজাদ।
তদন্তের বিষয়ে এসআই বিল্লাল আল আজাদ জানা, “তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই ২৪ জানুয়ারি পুলিশের একটি দল যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায়। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হলেও, সেগুলো স্পষ্ট ছিল না। পরে, ধোলাইপাড় থেকে ফ্লাইওভারের যে অংশ যাত্রাবাড়ীতে মিশেছে সেখানের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, একটি লেগুনা থেকে কিছু একটা পড়ে যাচ্ছে বা ফেলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০০ ফুট দূরে ঘটেছে।
এসআই বিল্লাল আল আজাদ বলেন, “সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আর কিছুই বোঝা না গেলেও আমরা নিশ্চিত হই, ভুক্তভোগীকে লেগুনা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে এবং সেই লেগুনার পেছনে লাল রঙের একটি চিহ্ন আছে।“
তিনি জানান, যাত্রাবাড়ী ও এর আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় এক হাজারেরও বেশি লেগুনা চলাচল করে ফলে এতো লেগুনার মাঝে “লাল চিহ্ন” আছে এমন লেগুনা খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। তাই আর কোনো তথ্য না পাওয়ায় নকল পরিচয়ে হেলপার হিসেবে লেগুনায় কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, “অন্য লেগুনার হেলপার এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি একটি লেগুনা দুই দিন ধরে কাজে আসেনি। লেগুনাটি পাটেরবাগ এলাকায় একটি স্ট্যান্ডে রাখা আছে। এই তথ্যানুসারে সেখানে গিয়ে দেখি লেগুনাটির পেছনে লাল রঙের চিহ্ন দেওয়া। লেগুনা খুঁজে পাওয়ায় মামলা এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ায় নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন এসআই বিল্লাল আল আজাদ। তিনি জানান, লেগুনার গ্যারেজের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লেগুনার চালক ফরহাদ মাদারীপুরে তার শশুরবাড়িতে গেছেন।
পরে, মাদারীপুর গিয়ে ওই চালকের সঙ্গে কথা বললে জানা যায় ঘটনার দিন তিনি লেগুনাটি চালাচ্ছিলেন না। তার বদলে মঞ্জু ও আব্দুর রহমান নামে লেগুনাটি নিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে গোপন সূত্রের ভিত্তিতে, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান চালিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি মঞ্জু ও আব্দুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেন তিনি।
এরা হলেন- লেগুনার চালক মঞ্জু, তার সহযোগী আব্দুর রহমান, রুবেল ও রিপন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২৭ জানুয়ারি দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর চারজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দি থেকে উঠে আসে ঘটনার দিনের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। আসামিরা জানান, গত ২১ জানুয়ারি লেগুনা নিয়ে বের হন তারা। এ সময় চালকের আসনে ছিলেন মঞ্জু, তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন আব্দুর রহমান এবং যাত্রীবেশে ছিলেন রুবেল ও রিপন। উদ্দেশ্য ছিল ছিনতাইয়ের। কিন্তু কয়েক দফায় ব্যর্থ হয়ে ভোর ৫টার দিকে তুষারধারা আবাসিক এলাকার সাদ্দাম মার্কেটের সামনে থেকে ভুক্তভোগী মহির উদ্দিনকে লেগুনায় তোলেন তারা। পরে, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বরাবর ফ্লাইওভারের ওপরে লেগুনাটি আসলে মহির উদ্দিনের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে চলন্ত লেগুনা থেকে তাকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যান।
এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, “মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিচক্ষণতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। শিগগিরই মামলার চার্জশিট আদালতে উপস্থাপন করা হবে।”