উৎপাদন ব্যয় ও পানির দামের সমন্বয়ের অজুহাতে জানুয়ারি মাসে এক লাফে পানির দাম তিন গুণ বাড়িয়েছে রাজশাহী ওয়াসা। আগে আবাসিক সংযোগে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম ধরা হতো ২ টাকা ২৭ পয়সা। যা এখন করা হয়েছে ৬ টাকা ৮১ পয়সা। এছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য সমপরিমাণ পানির মূল্য ছিল ৪ টাকা ৫৪ পয়সা। এখন করা হয়েছে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই পানির এই নতুন মূল্য কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মহামারির ক্লান্তিলগ্নে পানির এই মূল্য বৃদ্ধিকে মরার উপর খরার ঘা হিসেব উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নগরবাসী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
পানির দাম বাড়ানোকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী বলেন, “রাজশাহী ওয়াসা বর্তমানে যে সেবা দিয়ে আসছে, তাতেই তারা টাকা বেশি নিচ্ছে। সকাল ও রাতের কিছু সময়ে পানি পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যেই কালো পানি বের হয়। খাওয়া তো যায়ই না।”
তিনি আরও বলেন, “করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে রাত ৮টার পর থেকে নগরীর দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আয়ের পথ আরও কমে গেছে। এই সময়ের মধ্যে বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ বিল। এখন পানির দাম বাড়লও। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া বেড়ে যাবে। ব্যবসায়ীরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না।”
শিক্ষানগরী রাজশাহীতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মেস, বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। হঠাৎ পানির দাম তিন গুণ বাড়ানোয় মেস, বাসা ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন।
রাজশাহী মেস-মালিক সমিতির সভাপতি মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, “এই মুহূর্তে পানির দাম বাড়ানো হলো, সেটা আবারও শিক্ষার্থীদের মধ্যেই পড়বে। তাই আমরা চাই, এই মুহূর্তে পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে ওয়াসা সরে আসুক। কারণ, শিক্ষার্থী, মেস-মালিক কেউই ভালো নেই।”
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পানির দাম এক লাফে তিন গুণ বাড়ানোর ঘোষণার পরপরই এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন নগরবাসী। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেককেই। একই সঙ্গে ওয়াসার পানির গুণগত মান নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে পানির দাম কমানো না হলে আন্দোলনের হুশিয়ারিও দিচ্ছেন তারা।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, “রাজশাহী ওয়াসা নগরবাসীর প্রতি অত্যাচার করছে। যে সময় নগরবাসীর আয়-উপার্জন কমেছে, সে সময় ওয়াসা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের এ সিদ্ধান্তের পরপরই বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকায় আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। জনসংযোগ করেছি। নগরবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না আসলে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলনে যাওয়া হবে।”
এদিকে রাজশাহী ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, পানির দাম তিন গুণ বাড়ানো হলেও তা উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে অনেকটাই কম। এক হাজার লিটার পানি উৎপাদনে ওয়াসার খরচ হচ্ছে ৮ টাকা ৯০ পয়সা। আর তিন গুণ বাড়ানোর পরও আবাসিক এলাকার গ্রাহক পর্যায়ে পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ টাকা ৮১ পয়সা। আর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য সমপরিমাণ পানির জন্য পরিশোধ করতে হবে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাঁকির হোসেন জানান, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ওয়াসার পানির নতুন মূল্য কার্যকর করা হয়েছে। সময় ও উৎপাদন খরচের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই পানির নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর বর্তমান ওয়াসার পরিধি ও সেবা অনেক বেড়েছে। নতুন নতুন পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পানির দাম সেই তুলনায় বাড়েনি। অথচ এটিই ওয়াসার আয়ের উৎস। এজন্য গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের সব দিক বিবেচনায় রেখে পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) পানি সরবরাহ শাখাকে আলাদা করে ২০১০ সালের ১ আগস্ট রাজশাহী ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১১ সালের ১০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়াসার কার্যক্রম চালু হয়। এর আগে ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর ২০১৪ সালে পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল।