সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদকে অপসারণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সিলেট সার্কিট হাউসে শাবির আন্দোলনরত ১১ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তিন ঘন্টাব্যাপী বৈঠকশেষে সন্ধ্যায় তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “শাবি উপাচার্যকে অপসারণের দাবির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য আমরা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুনেছি। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়োগ কিংবা অপসারণের এখতিয়ার কেবল আচার্যের। আমরা তাদের দাবিগুলো আচার্যের কাছে তুলে ধরবো। এ বিষয়ে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ডা. দীপু মনি বলেন, “আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বক্তব্য এবং দাবি-দাওয়া শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে তাদের বক্তব্য আমরা সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে তা পূরণ করার চেষ্টা করব। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সুবিধার বিষয়ে আন্দোলনকারীরা তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাকি পদক্ষেপগুলো শিগগিরই গ্রহণ করা হবে।”
ব্রিফিংকালে তিনি আরও বলেন, “আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে আমরা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই।”
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে সিলেট সার্কিট হাউসে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষার্থীরা মোট ৮টি দাবি তুলে ধরেন। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ ছাড়াও তাদের অন্য দাবিসমূহ হচ্ছে-ক্লাস-পরীক্ষা চালু, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা প্রত্যাহার, আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর বন্ধ থাকা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু করা, পুলিশের গুলিতে আহত শিক্ষার্থী সজল কুণ্ডকে এককালীন আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া ও তার জন্য নবম গ্রেডের চাকরি নিশ্চিত করা, অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ইয়াসমিন হককে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানো, পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম কার্যকর করা, শিক্ষক নিয়োগে পিএইচডি এবং ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা।
শুক্রবার বৈঠকের বাইরে অপেক্ষমাণ শাবির জিওগ্রাফি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী স্বপ্নিল জানান, উপাচার্য পদত্যাগের এক দফা দাবিতে তারা এখনও অনড়। এছাড়া, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক ডা. আমেনা পারভিন এবং প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইলকে নিয়েও তাদের আপত্তি রয়েছেন। আন্দোলন চলাকালে ড. আমেনা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে রাস্তায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রীর সিলেটের সফর তালিকা অনুযায়ী, শুক্রবার বেলা ৪টায় শাবি’র শিক্ষকমণ্ডলী, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে তার বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসে যাবার আগেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে বসেন। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৈঠক চলে।
শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার সকালে সিলেট পৌঁছে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি হযরত শাহজালাল (র.) মাজার জিয়ারত ও এমসি কলেজে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি প্রভোস্টবিরোধী আন্দোলনের সময় অবরুদ্ধ উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে মুক্ত করতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পুলিশসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। এ সময় আহত হন ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ। হামলার পরপরই প্রভোস্ট বিরোধী আন্দোলন উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনশন শুরু করার ১৬৩ ঘণ্টা পর ২৬ জানুয়ারি শিক্ষাবিদ-কলামিস্ট অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান এবং সব দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন। এরপর থেকে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে শিক্ষার্থীরা।