Wednesday, August 13, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণেই আজও হয়নি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার

এক দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও তদন্ত শেষ না হওয়া এবং দোষী ব্যক্তিরা বিচারের আওতায় না আসায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের স্পেশাল প্রসিডিউরস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০২ এএম

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের এক দশক পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজও এ হত্যার বিচার তো দূরের কথা, বারবার তারিখ পেছানোর কারণে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) আজ পর্যন্ত আদালতের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনই জমা দেয়নি। শুধু তাই না, হত্যাকাণ্ডের পর সরকারের কাছ থেকে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের পাঠানো চিঠিরও কোনো জবাব আদৌ পাওয়া যায়নি।

এক দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও তদন্ত শেষ না হওয়া এবং দোষী ব্যক্তিরা বিচারের আওতায় না আসায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের স্পেশাল প্রসিডিউরস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন সংস্থাটির মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণেই এই বিচার হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা থেকে পাঠানো সংবাদ মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।

এ বিশেষজ্ঞরা হলেন- জাতিসংঘের মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান, মানবাধিকার কর্মীদের অবস্থাবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার মেরি লঅলার, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা ও সমিতি গঠনের অধিকারবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ক্লেমেন্ট এন ভৌল, নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অসম্মানজনক আচরণ বা শাস্তিবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার নিলস মেলজার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা বা বিধিবহির্ভূত হত্যাবিষয়ক বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার মরিস টিডবল–বিঞ্জ। এসব বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের স্পেশাল প্রসিডিউরসের (জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থায় স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সর্ববৃহৎ পর্ষদ) অংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, “সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচার না হলে অপরাধীরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে এবং তা সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখিয়ে চুপ করানোর উদ্দেশ্যে আরও আক্রমণ, ভীতি প্রদর্শন ও হত্যাকাণ্ডে উৎসাহ জোগায়। আমরা বাংলাদেশে গভীর উদ্বেগের সেই লক্ষণগুলো দেখছি।”

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি নিজেদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ওই বছরেই উচ্চ আদালত র‍্যাবকে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেন। র‍্যাবকে তাদের তদন্তের ফলাফল জমা দিতে বলা হলেও তা এখনও সম্পন্ন হয়নি। এখন পর্যন্ত ৮৫ বার  আলোচিত এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় তারিখ পিছিয়েছে।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে গুলিতে নিহত সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী আবদুল হাকিম শিমুলের মামলার বিচারকার্য বারবার বিলম্বিত হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শাহজাদপুরের তৎকালীন মেয়র এ হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্ত হলেও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের আওতায় তিনিসহ মামলার সব আসামি বর্তমানে জামিনে আছেন।

এছাড়া, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাবন্দী অবস্থায় মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের কথাও বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়ার ৯ মাসের মাথায় তার মৃত্যু হয়।

জেনেভা থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় মুশতাক আহমেদ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং অসুস্থ হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে নিতে তিন ঘণ্টা দেরি হয়েছিল বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর বিষয়ে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠিত অভ্যন্তরীণ একটি তদন্ত কমিটি পরিবারের দাবির বিষয়ে তদন্ত না করেই মুশতাক আহমেদেরর মৃত্যুকে স্বাভাবিক ঘোষণা করে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ জানালেও সরকার কোনো জবাব দেয়নি।” 

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “গত ১০ বছরে বাংলাদেশে অন্তত ১৫ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ সময়ে বাংলাদেশে সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীরা বিনা বিচারে আটক, আক্রমণ, অপহরণ, অনলাইন ও অফলাইনে ভীতি প্রদর্শন এবং আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার তদন্ত বা বিচার হয়নি বললেই চলে। নিপীড়নের কিছু ঘটনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি জড়িত বলে ধারণা করা হয়।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরাও এ সংক্রান্ত বহু খবর পেয়েছেন। তারা বিভিন্ন অভিযোগ বাংলাদেশ সরকারের নজরে আনলেও প্রায়ই কোনো জবাব দেওয়া হয় না।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেন, “আক্রমণ, ভয়ভীতি ও হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার সহজাত ঝুঁকি থেকে সাংবাদিকতা মুক্ত থাকা উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটাই বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও সুশীল সমাজের সদস্যদের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি এবং বাংলাদেশের অন্যান্য সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দ্রুত পরিপূর্ণ, স্বাধীন ও কার্যকর তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

   

About

Popular Links

x