সাধারণ নীতি অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন সংস্থাগুলো শারীরিক সীমাবদ্ধতা বা স্বাভাবিক চলাফেরায় সমস্যা থাকা ব্যক্তিদের বিনা খরচে হুইলচেয়ার সেবা দিয়ে থাকে। তবে ভারতের বিশিষ্ট অধিকারকর্মী রাজীব রাজনের অভিযোগ, চেন্নাই এয়ারপোর্টে ঢাকাগামী ফ্লাইটে ওঠার সময় তার কাছ থেকে হুইলচেয়ার পরিষেবা বাবদ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৭শ’ টাকা আদায় করেছে বাংলাদেশের একটি এয়ারলাইন।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, রবিবার (৬ মার্চ) একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য সস্ত্রীক ঢাকার বিমান ধরতে চেন্নাই এয়ারপোর্টে গিয়ে এ ঘটনার সম্মুখীন হন রাজীব রাজন।
রাজীব রাজন ও তার স্ত্রী দুজনই ভারতে প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন।
রাজীব রাজন জানান, বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনে তাদের টিকিট বুক করা ছিল। এয়ারলাইনে কর্তৃপক্ষ তাকে প্রথমেই জানিয়ে দেয়, এয়ারপোর্টে হুইলচেয়ার পরিষেবা নিতে হলে তাকে বাড়তি ২৫০০ রুপি (৩৫ ডলার) দিতে হবে। হুইলচেয়ার ছাড়া তার পক্ষে চলাফেরা করা সম্ভব না বলে তার সামনে বিকল্প কোনো উপায়ও ছিল না।
তিনি আরও জানান, পরে ইউএস বাংলার কাউন্টারে গিয়ে এ ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদ করা হলে কর্তৃপক্ষ তাকে হুইলচেয়ার বাবদ আদায় করা অতিরিক্ত ওই অর্থ ফেরত দিতে রাজি হলেও সেই সঙ্গেই তাকে দিয়ে একটি ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) বন্ডে সই করিয়ে নেওয়া হয়। ওই বন্ডে সই না করলে তিনি ফ্লাইটে উঠতে পারবেন না বলেও জানানো হয় তাকে।
সামাজিক যোগোযোগমাধ্যম টুইটারে ওইদিন রাতেই পুরো ঘটনাটি রাজীব রাজন বলেন, “ইন্টারন্যাশনাল ডিসএবিলিটি অ্যালায়েন্স আয়োজিত একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সে সহ-ফেসিলিটেটর হিসেবে যোগ দিতে ঢাকা যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার হুইলচেয়ারের জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স আমার কাছে ২৫০০ রুপি নিয়েছে। পরে আমার সঙ্গীকে দিয়ে ইনডেমনিটিতেও সই করিয়েছে– যা ডিজিসিএ-র সনদ ও প্রতিবন্ধীদের অধিকারের লঙ্ঘন।”
Traveling to Bangladesh for as a Co Facilitator for BRIDGE CRPD-SDGS training IDA BY US Bangla airline they charged Rs 250a0 for my wheelchair and got the indiminity form signed by my by escort a violation of dgca car RPwD and CRPD @DGCAIndia @MSJEGOI @MoCA_GoI pic.twitter.com/kC5KCgrMZl
— Rajiv Rajan (@RajivSpeaks) March 6, 2022
ওই টুইটে তিনি স্বাক্ষরিত ইনডেমনিটি বন্ড, টাকার রশিদ ও নিজের বোর্ডিং পাসের ছবি যোগ করেন। সেই সঙ্গে ট্যাগ করেন ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়, সামাজিক ন্যায় মন্ত্রণালয় এবং বিমান চলাচলের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ডিজিসিএ-কেও।
এ ঘটনায় ইউএস বাংলার চেন্নাই অফিসের এক কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে তিনি ব্যাপারটি অস্বীকার করেননি। তবে হুইলচেয়ার আরোহী যাত্রীদের কাছ থেকে তারা বাড়তি পয়সা লুটে নেওয়ার বিষয়টি অমূলক বলে দাবি তার।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “আসলে আমরা একটি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স– চেন্নাইতে আমাদের পূর্ণাঙ্গ পরিষেবা নেই। চেন্নাইতে গ্রাউন্ড সাপোর্টের জন্য আমরা একটি স্থানীয় এয়ারলাইনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, তারা হুইলচেয়ারের ভাড়ার জন্য যাত্রীপিছু আমাদের কাছ থেকে ৩৫ ডলার করে নেয়। সেটাই যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়।”
ভারতে ডিসএবিলিটি রাইটস অ্যাক্টিভিস্টরা জানান, প্রতিবন্ধী যাত্রীদের কাছ থেকে এভাবে অর্থ আদায় পুরোপুরি নিয়মবিরুদ্ধ ও বেআইনি।
“নিষ্ঠা ডিসএবিলিটি রাইটস সেন্টার” নামক সংগঠনের কর্ণধার নিশা মালহোত্রা বলেন, “প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে জাতিসংঘের যে সনদ আছে, এভাবে বাড়তি অর্থ চাওয়াটা তার সম্পূর্ণ বিরোধী। রাজীব রাজনের প্রতিবাদ সম্পূর্ণ বৈধ– বস্তুত এই হেনস্থার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন সংস্থার কাছে তিনি ক্ষতিপূরণও চাইতে পারেন।”
এদিকে, ভারতে বেসামরিক বিমান চলাচলের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ডিজিসিএ-ও গোটা বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। প্রয়োজনে ইউএস-বাংলার কাছে তারা কৈফিয়ত চাইতে তারা এয়ারলাইনে কর্তৃপক্ষকে তলবও করতে পারে।