ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে “নাপা সিরাপ খেয়ে” মোহাম্মদ ইয়াসিন খান (৭) ও মুরসালিন খান (৪) নামের দুই ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত কাজ শুরু করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি।
রবিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে গিয়ে নিহত দুই শিশুর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. আকিব হোসেন। তার সঙ্গে অধিদপ্তরের দুইজন উপ-পরিচালক ও দুইজন সহকারী পরিচালক এবং একজন পরিদর্শক ছিলেন।
তদন্ত কমিটি মৃত দুই শিশুর মা লিমা বেগম ও চাচা উজ্জ্বল মিয়া ও দাদি লিলুফা বেগমের সাক্ষ্য নেয়।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. আকিব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, যে সিরাপটি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, সেটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। একই ওষুধের অন্যান্য ব্যাচের ওষুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- ওষুধ প্রশাসন: নাপা সিরাপে ক্ষতিকর কিছু মেলেনি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ্ জানান, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ঔষধ অধিদপ্তর, কুমিল্লা ঔষধ অধিদপ্তর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের থেকে পরিদর্শন টিম গঠন করা হয়েছে।
জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউছার জানান, দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় জেলার ফার্মেসিগুলোকে আপাতত নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো শিশুর যেন কোনো রকমের ক্ষতি না হয় সেই চিন্তা থেকে এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে তিনটি নির্দিষ্ট ব্যাচে প্রস্তুত ঔষধটির নমুনা পরীক্ষায় ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ১৪ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ।
তিনি বলেন, “আশুগঞ্জের যে দোকান থেকে ওষুধ কিনে সেবনের পর শিশু দুটি মারা গেছে, সেই দোকানের ৮টি বোতল সংগ্রহ করা হয় স্যাম্পল হিসেবে। এছাড়া আরও দুটি ব্যাচের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু নমুনা পরীক্ষায় ওই তিনটি ব্যাচের নাপা সিরাপে কোনো ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি।”
প্রসঙ্গত, শিশু দুটি কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিল। তাই স্থানীয় একটি দোকান নাপা সিরাপ এনে তাদেরকে খাওয়ানো হয়েছিল। বিকেল ৫টার দিকে তাদের দুজনকে একসঙ্গে একই বোতলের সিরাপ খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পর দুজনেই বমি করতে শুরু করে। পরে শিশু দুটিকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারপর সেখান থেকে শিশু দুটিকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে সাত ও পাঁচ বছর বয়সী শিশু দুটি বাড়িতেই মারা যায়।