“নাপা সিরাপ খেয়ে” নয়, বরং মায়ের পরকীয়া প্রেম এবং বিয়ের সিদ্ধান্তের জেরেই পরিকল্পিতভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মোহাম্মদ ইয়াসিন খান (৭) ও মুরসালিন খান (৪) নামের দুই ভাইকে বলি হতে হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।
নিহত দুই শিশুর বাবা ইসমাঈল হোসেনেরও অভিযোগ, পরকীয়ার জেরে বিষ মেশানো মিষ্টি খাইয়ে তাদের মা লিমা বেগম সন্তানদের হত্যা করেছেন।
এ অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) ভোররাতে আশুগঞ্জের দুর্গাপুর এলাকায় স্বামীর বাড়ি থেকে লিমাকে আটক করে পুলিশ। পরে মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরে এ ঘটনাকে “পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড” উল্লেখ করে তিনি নিজে বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় লিমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন ও আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
আরও পড়ুন- সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু, নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ
মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে ওই দুই শিশুকে হত্যা করেছেন লিমা আক্তার। তার সঙ্গে একই কারখানায় কাজ করা শফিউল্লাহ সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। বিয়ে করার জন্য তারা ওই বাচ্চা দুটিকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে।
তিনি জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী শফিউল্লাহ এবং বাচ্চাদের মা লিমা আক্তার নাপা সিরাপের সাথে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানোর পর ওই বাচ্চা দুটি মারা যায়। মৃত্যুর বিষয়টি অন্যদিকে ধাবিত করতে নাপা সিরাপটি ব্যবহার করা হয়েছে। আর মৃত্যুর কারণ হিসেবে নাপা সিরাপের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য এমনটি করা হয়েছে।
মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন জানান, কিন্তু লিমার আচরণে প্রথমেই পুলিশের সন্দেহ হয়। পরকীয়া প্রেমিক শফিউল্লাহ সঙ্গে মা লিমা আক্তারের মোবাইল ফোনের কথোপকথন এবং পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে দুই শিশু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করেছেন লিমা। এ ঘটনায় লিমার প্রেমিক সফিউল্লাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন- ওষুধ প্রশাসন: নাপা সিরাপে ক্ষতিকর কিছু মেলেনি
আশুগঞ্জ থানার ওসি আজাদ রহমান বলেন, “পরিকল্পিতভাবে ওই দুই শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুদের মাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিকেল ৩টায় সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।”
উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাঈল হোসেনের দুই ছেলে ইয়াছিন ও মোরসালিনের মৃত্যু হয়। তাদের মা লিমা বেগমের অভিযোগ ছিল, দুই ভাইয়েরই জ্বর থাকায় ঘটনার দিন বিকেলে দুই শিশুর দাদি পাশের বাজারের মাঈন উদ্দিনের ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ নিয়ে আসেন। দুই শিশুকে সিরাপ খাওয়ানোর পর তারা বমি করতে শুরু করে।
অবস্থার অবনতি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয় তাদের। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক । চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাত ৯টার দিকে ইয়াসিনের মৃত্যু হয়। একই দিন রাত ১০টার দিকে মোরসালিনও মারা যায়।
ঘটনার পর সারা দেশ থেকে ওই সিরাপের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এছাড়া, বিষয়টি নিয়ে ঢাকার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও তদন্ত শুরু করে।
পরে সারা দেশ থেকে তিনটি নির্দিষ্ট ব্যাচে প্রস্তুত ঔষধটির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে পাঠায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে নমুনা পরীক্ষায় ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।