মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের সঙ্গে বহুদিন ধরেই পশ্চিমা ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ট। সময়ে-অসময়ে এসব দেশগুলোকে পাশে পেয়েছে সৌদিকে। আর বিভিন্ন সমস্যায় তাদেরও সমর্থন পেয়েছে সৌদি আরব।
তবে সম্প্রতি তুরষ্কের ইস্তানবুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার অভিযোগ ওঠে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে। এর জের ধরেই পশ্চিমা অনেক দেশই সৌদির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। হুমকি দেওয়া হয় বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও।
কিন্তু কতোটুকু আলোর মুখ দেখতে পারে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা না নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। কারণ, রাজনৈতিক, ভৌগলিক ও অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে সৌদি আরব পশ্চিমাদের কাছে গুরত্বপূর্ণ। এর মধ্যে পাঁচটি কারণ তুলে ধরেছে বিবিসি-
জ্বালানি তেল সরবরাহ ও দাম
পৃথিবীর মোট তেলের মধ্যে ১৮ শতাংশ রয়েছে সৌদি আরবের দখলে। আর তেল রপ্তানির দিক দিয়ে দেশটির অবস্থা একেবারে শীর্ষে। এর ফলে বিশ্ব তেলের বাজারে সৌদি আরবের প্রভাব গুরত্বপূর্ণ।
উদাহরণস্বরূপ, সৌদি যদি তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। তাহলে বিশ্বজুড়ে তেলের যোগান কমে যাবে। এক্ষেত্রে এই ঘাটতি যদি অন্য তেল রপ্তানিকারী দেশগুলো পূরণ না করে তাহলে বেড়ে যাবে জ্বালানির দাম।
সামরিক শক্তি
২০১৭ সালে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটি ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করে। এ ছাড়া ১০ বছরে ৩৫০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্র কেনে সৌদি। এই সামরিক শক্তির কারণে পশ্চিমা শক্তিগুলো বুঝেশুনে চলে সৌদিকে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান
মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে বড় ভূমিকা পালন করছে সৌদি আরব। মার্কিন জোটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে তারা। এ ছাড়া ৪০ মুসলিম দেশকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস দমনে সেনাজোট গঠন করেছে। একারণেই সৌদির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রাখার ঘোষণা দেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।
আঞ্চলিক আধিপত্য
মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে চায় সৌদি। এ ক্ষেত্রে দেশটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান। এ কারণে সৌদি সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বৈরী। আর ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের সাপে-নেউলে সম্পর্ক। দুই পক্ষের সাধারণ শত্রুকে চাপে রাখতে সৌদি-পশ্চিমা দেশগুলো হাত মিলিয়ে চলে।
ব্যবসা ও বিনিয়োগ
সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশ জোরালো। ২০১৭ সালে দেশদুটির মধ্যে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। দুই দেশের এই বাণিজ্যিক সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৬৫ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
মার্কিনিদের পাশাপাশি আরও অনেক পশ্চিমা দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে সৌদির। আর এ কারণেই দেশগুলোর কাছে সৌদি এতোটা গুরুত্বপূর্ণ।