বগুড়ার শিবগঞ্জে দিনমজুর প্রেমিক ও কলেজছাত্রী প্রেমিকার বিয়ে মেয়েপক্ষ মেনে না নেওয়ায় অল্প সময়ের ব্যবধানে ওই যুগল আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে প্রেমিককে ফোনে রেখে প্রেমিকা বিষপান করেন, এরপর প্রেমিক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে গভীর রাতে পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করেছে।
সোমবার (২১ মার্চ) রাতে উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়নের দামগারা কারিগরপাড়া ও পাশের মাসিমপুর চালুঞ্জা তালুকদারপাড়ায় নিজ নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যাকারী দম্পতি হলেন- বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মাঝিহট্ট ইউনিয়নের দামগারা কারিগরপাড়ার দিনমজুর সবুজ মিয়া (২১) এবং একই ইউনিয়নের মাসিমপুর চালুঞ্জা তালুকদারপাড়ার মার্জিয়া জান্নাত (১৯)। মার্জিয়া জেলার নামুজা ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল।
মাঝিহট্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসকেন্দার আলী শাহানা তাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এর আগেও তারা দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেছিল। তালাকের পর মেয়ের পরিবার থেকে দুদিন আগে জোর করে এক প্রবাসীর সঙ্গে মেয়েকে টেলিফোনে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সোমবার দুজন আবারও পালিয়ে বিয়ে করে।
পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও স্বজনরা জানায়, পাশাপাশি দুটি গ্রামের দিনমজুর সবুজ মিয়া ও কলেজ ছাত্রী মার্জিয়া জান্নাতের মধ্যে অসম প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সবুজ মাঝিহট্ট সৈয়দ মিনা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। প্রায় ৬ মাস আগে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু মেয়ের প্রভাবশালী পরিবার সে বিয়ে মেনে নেয়নি। পরবর্তীতে তারা মেয়েকে ধরে এনে সবুজ মিয়াকে তালাক দিতে বাধ্য করে। তবে এরপরও তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক অব্যাহত ছিল।
দুদিন আগে মার্জিয়া জান্নাতকে জোরপূর্বক এক প্রবাসীর সাথে টেলিফোনে বিয়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সোমবার জান্নাত বাড়ি থেকে পালিয়ে সবুজের কাছে আসলে পরে তারা গোপনে কাজীর কাছে আবারও বিয়ে করেন। এরপর সবুজ তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা জান্নাতকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। সবুজের দরিদ্র পরিবার বিয়ে মেনে নেয়। তবে জান্নাতের প্রভাবশালী পরিবার সোমবার সন্ধ্যার দিকে সবুজের বাড়িতে গিয়ে জোরপূর্বক জান্নাতকে নিয়ে আসে।
পরিবারের কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও সোমবার রাত ৯টার দিকে জান্নাত তার স্বামী সবুজকে ফোন দেন। ঘরে মুঠোফোনে কথা বলার একপর্যায়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। সবুজকে ফোনে রেখে জান্নাত বিষপান করে মারা যান। অপরপ্রান্ত থেকে নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন সবুজ।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীরা বাড়ি দুটিতে ভিড় করেন। খবর পেয়ে দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইমরান হোসেন প্রেমিক সবুজ মিয়ার ও এসআই নাসির উদ্দিন প্রেমিকা মার্জিয়া জান্নাতের মরদেহ উদ্ধার করেন।
শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক কুমার দাস জানান, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দুটি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। কোনো পক্ষ আইনের আশ্রয় নিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।