জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে “আত্মহত্যার” জন্য কীটনাশক নিয়ে ঘুরছিলেন সোহাগ ফকির (৩২) নামে এক যুবক। স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছ থেকেও পাননি আশানুরূপ সমাধান। হতাশ হয়ে বুধবার (২৩ মার্চ) সকালে একটি ব্যাগে জমির কাগজপত্র ও কীটনাশক নিয়ে সহকারী কমিশনার ভূমির কার্যালয়ে যান তিনি। সোহাগের অভিযোগ, তার শাশুড়ির জমিতে বেল্লাল ফকির নামে এক ব্যক্তি জোর করে দালান নির্মাণ করছে। তিনি বাধা দিয়েও নির্মাণকাজ ঠেকাতে পারেননি।
এসিল্যান্ডকে তিনি বলেন, জমি সংক্রান্ত এ বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেবেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে। সোহাগ ফকিরের বাড়ি নরসিংদীর পালাশ উপজেলায়। তবে তিনি টুঙ্গিপাআড়ার বাঁশবাড়িয়া চরপাড়া গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।
সোহাগের বরাত দিয়ে ডুমুরিয়া ইউনিয়নের তাহশিলদার চিরঞ্জীব বিশ্বাস ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, শ্বশুর শাহজাহান খা মারা যাওয়ার পর ঝনঝনিয়া মৌজায় তার নামে থাকা প্রায় দুই বিঘা জমি কবুলিয়ত সূত্রে মালিক হন সোহাগের শাশুড়ি রাশিদা বেগম। কিন্তু ওই সম্পত্তিতে প্রতিবেশী বেল্লাল শেখ জোর করে দালান নির্মাণ করছেন। নির্মাণকাজে বাধা দিয়েও ঠেকাতে না পেরে স্থানীয় মুরব্বিদের দ্বারস্থ হন সোহাগ। কিন্তু তারা কোনো সুষ্ঠু সমাধান দেননি। সেই কষ্টে সোহাগ কাগজপত্র ও কীটনাশক নিয়ে এসিল্যান্ডের কার্যালয়ে হাজির হন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেদারুল ইসলাম তার সমস্যার কথা জানতে চাইলে সোহাগ কাঁদতে কাঁদতে বিস্তারিত জানান। এসিল্যান্ড তখন তার কাগজপত্রের ব্যাগে একটি কীটনাশকের বোতল দেখতে পান। তিনি জোর করে বোতলটি নিয়ে নষ্ট করে ফেলেন। এরপর অভিযোগকারীকে নিজের গাড়িতে নিয়ে তার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
এরপর এসিল্যান্ড বিবাদমান জমিতে গিয়ে স্থানীয় মুরব্বিদের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের কাগজপত্র দেখতে চান। যাচাই করে দেখা যায়, এসএ ও বিআরএসে সোহাগের শাশুড়ির নামে কোনো রেকর্ড হয়নি। সেই সম্পত্তির কিছু রেকর্ড হয়েছে একই গ্রামের হান্নান ফকিরের নামে। হান্নান ফকিরের ছেলে বেলাল ফকির যেখানে দালান ঘর নির্মাণ করছেন সেই জমি দুইপক্ষের কারোই নয়। ৯১৮ দাগের সেই সম্পত্তি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। তখনই বেলাল ফকিরের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন এসিল্যান্ড।
এছাড়া সোহাগ নামের ওই যুবককে বুঝিয়ে আত্মহত্যার পথ থেকে বিরত থাকতে বলেন এসিল্যান্ড দেদারুল ইসলাম।
সোহাগ ফকির নামের ওই যুবকের ভাষ্য, “কাগজপত্র সঠিকভাবে না বোঝার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে বেছে নিতে চেয়েছিলাম। পরে এসিল্যান্ডকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ঘরের নির্মাণকাজ বন্ধ করেন। সেই সঙ্গে আমাকে আত্মহত্যার পথ থেকে বিরত থাকতে বলেন। তখন তাকে কথা দেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেবো না।”
“বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।”
এ বিষয়ে টুঙ্গিপাড়ার এসিল্যান্ড দেদারুল ইসলাম বলেন, “সোহাগ নামের ওই যুবক ভুল বুঝে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিল। তখন তাকে বুঝিয়ে এই কাজ থেকে বিরত থাকতে বলি। তখন সেও বিষয়টি বুঝে আত্মহত্যার পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া সরকারের জমিতে নির্মাণাধীন দালান ঘরের কাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”