কক্সবাজারের খুরুশকুলে ৭ রাখাইন পরিবারের ৩৫ থেকে ৪০ সদস্যকে প্রভাবশালী একটি গ্রুপ এলাকাছাড়া করে রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ সাড়ে ৫ মাস ধরে এসব পরিবার শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করে আসছে। সম্মান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নিরাপদে বাড়ি ফিরতে সংবাদ সম্মেলন করেছে এসব পরিবার।
বুধবার (৩০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টারদিকে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মং মং। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, আবুরী, মংপ্রু, মংক্যএ, চ চা, অংথেন প্রু, চেন থেন উ, মং প্রুরী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মং মং বলেন,“ কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল রাখাইন পাড়ায় একমাত্র বৌদ্ধ মন্দিরের অধ্যক্ষ উ শাসন বংশ। কিন্তু কিছু উগ্র দুর্বৃত্তরা এবং তাদের কয়েকজন আত্মীয়স্বজন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে গ্রাম থেকে আমাদের ৭টি পরিবারকে ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর বিতারিত করে। তারপর থেকে আমরা দেশের বিভিন্ন জেলায় উদ্বাস্তুর মতো মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমাদের বাড়িগুলোতে বারবার হামলা চালিয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেও নিয়েছে তারা। আমরা প্রতিকারের আশায় বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি। অন্যদিকে দুর্বত্তরা দ্বিগুন উৎসাহ আমাদেরকে গ্রাম থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি উক্ত এলাকা থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর থেকে বাবা, মা মারা যাওয়ার পরও তাদের মুখ দেখতে দেওয়া হয়নি।”
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “ওই এলাকায় রাখাইন পাড়ায় অবস্থিত একটি সমবায় সমিতির মালিকানাধীন ২০ শতক জমি উ শাসন ভিক্ষুর নামে হস্তান্তরের চাপ দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি মেনে না নিলে আমাদেরকে সমাজচ্যুত করে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়। প্রায় ৭/৮ মাস আগে সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন তারা আমাদের বাড়িগুলোর ওপর বৃষ্টির মতো পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে, যার অডিও রেকর্ডিং এবং স্থিরচিত্র আমাদের কাছে আছে।”
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কিছু সমাজ সচেতন নারী-পুরুষ মিলে গ্রামের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে একটি সমবায় সমিতি গঠন করে এবং ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সমিতির নিজস্ব তহবিলের টাকায় ১৯৯৮ সালে আমান উল্লাহ গং হতে ২০ শতক জমি ক্রয় করে এবং ৬৬১ কবলা করত্ব সমিতির নামে ১০৮২৬ নং সৃজিত খতিয়ান করা হয়। ওই জমিতে বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে তারা। জমির দলিল গ্রামের বৌদ্ধ মন্দিরের অধ্যক্ষ ভান্তে উ শাসন বংশের কাছে রক্ষিত ছিল। পরিবর্তিতে ওই বংশের এক সদস্য জমিটি রেজিস্ট্রির নাম পরিবর্তন করতে অনৈতিক চেষ্টা করে এবং সমিতির পরিবারগুলোকে মন্দির এবং শ্মশানে প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে। রাতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে মাসের পর মাস মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন করতে থাকে। একপর্যায়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয় এসব পরিবার।