ভোজ্যতেলের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ভোজ্যতেলের মধ্যে খোলা সয়াবিন তেলের ক্ষেত্রে সর্বশেষ মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে। মূলত সরবরাহে ঘাটতি থাকার কারণেই খুচরা এবং পাইকারি উভয়ক্ষেত্রেই খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ও পাম তেলের দাম মণপ্রতি ৪১০ থেকে ৪৫০ টাকা বেড়েছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজারে খুচরা বিক্রেতাদের লিটারপ্রতি ১৫২-১৫৮ টাকায় খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে, যা আগের সপ্তাহের দামের চেয়ে প্রায় ৩.৭% বেশি।
এদিকে, টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, প্রতি লিটার পাম তেল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গত ১৪ মার্চ থেকে ঢাকায় বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
দুই ধরনের ভোজ্যতেলের খুচরা মূল্য যথাক্রমে লিটারপ্রতি ১৩৬ টাকা এবং ১২৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজার সূত্রে জানা যায়, প্রতি মণ খোলা সয়াবিন তেল ৬,২০০-৬,৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা আগে ৫,৮০০ টাকা ছিল। অন্যদিকে, প্রতি মণ পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৫,৬২০ টাকায়, যা আগে ছিল ৫,১৭০ টাকা।
পাইকারি বিক্রেতারা জানান, মিল গেট বা ফার্স্ট সেলার পয়েন্টে দাম বাড়ায় তারা প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৫-২০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন।
দুই সপ্তাহ আগে সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল এবং পাম তেলের পাইকারি মূল্য যথাক্রমে ১৩৩ টাকা ও ১২৭ টাকা নির্ধারণ করলেও তারা তা মানতে পারছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে খাতুনগঞ্জ বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, বাজারে চাহিদার তুলনায় তেলের সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে মিল গেট থেকে বেশি দামে তেল কেনার কথাও জানান ওই ব্যবসায়ী।
বাজার সূত্রে জানা যায়, ডিলাররা বাজারে সব ব্র্যান্ডের তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে বাজারের চাহিদার অর্ধেকও পূরণ হচ্ছে না। এ কারণে পাইকাররা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি বলেন, “সরকার তেলের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও সিন্ডিকেট, দুর্নীতি ও কারসাজির কারণে তা মানা সম্ভব হচ্ছে না। মিল গেট থেকে শুরু করে আমাদের পর্যন্ত অনেক পক্ষ জড়িত, যারা নিজেদের ইচ্ছামতো বাজার ও ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণ করে।”
তিনি আরও বলেন, “পুরো বিষয়টিই প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি। আমরা যারা তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ের ব্যবসায়ী, তারাও তাদের কাছে জিম্মি। তাদের হাতে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ থাকায় এখানে আমাদের বা কারও কিছু করার নেই।”