সাভারে রানা প্লাজার ধ্বসের নয় বছরেও ক্ষত শুকায়নি আহত শ্রমিকদের। ভয়াবহ এই ধ্বসের ঘটনায় অনেকেই হারিয়েছেন তার প্রিয়জন, বেঁচে গিয়েও কেউ কেউ কাটাচ্ছেন দুর্বিষহ জীবন। অনেকেই ফিরতে পারেননি স্বাভাবিক জীবনে। সরকারি কিছু অনুদান পেলেও তার সিংহভাগই খরচ হয়েছে চিকিৎসার পেছনে। বেঁচে থাকার প্রতিটা মুহূর্ত যেন যন্ত্রণার। সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা আর মানসিক যন্ত্রণা প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাদের।
ঠিক তাদেরই একজন নিলুফা বেগম। রানা প্লাজার নয় বছর উপলক্ষে শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে আসেন ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার সামনে। তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিনিধির।
সাভার পৌর এলাকার আমতলা মহল্লায় স্বামীর সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। কাজ করতেন রানা প্লাজার আট তলার প্যান্টন অ্যাপারেলস কারখানার সুইং অপারেটর হিসেবে। স্বামী ও তার আয়ে ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু ঘটনার দিন থেকে তার সব স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে যায়।
ঘটনার আগের দিন জানতে পেরেছিলেন ভবন ফাটলের বিষয়টি। তাই কাজে যেতে চাননি। কিন্তু সুপারভাইজারের ফোন আর বেতন আটকে দেওয়ার হুমকি সহ্য করতে না পেরে কাজে যেতে বাধ্য হন। সেই যাওয়াই যে তার পুরো জীবন এলোমেলো করে দিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন- রানা প্লাজা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সাড়ে ৫ বছর পর শুরু
ভবন ধসের সময় একটি বিম পড়ে ডান পায়ের বিভিন্ন জায়গা ভেঙে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় তার। প্রায় সাড়ে নয় ঘণ্টা আটকে থাকার পর তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় হাসপাতালে।

সরকারিভাবে তিনি সহযোগিতা পেয়েছিলেন তার বেশিরভাগই ব্যয় হয়েছে চিকিৎসার পেছনে। অনেক চেষ্টা করেছেন পা ঠিক করার, কিন্তু সুস্থ হয়নি সেই পা, আর জীবন। অবশেষে সেই পায়ে পচন ধরে গিয়েছে। চিকিৎসকরাও পা কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে এখনো পা কেটে ফেলারও ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি।
আরও পড়ুন- রানা প্লাজা ট্রাজেডি: ৯ বছরেও মেলেনি ক্ষতিপূরণ, বিচার হয়নি রানার
পা ছাড়া অচল নিলুফা ক্র্যাচে ভর করে হাটা চলা করতে হয়। নিলুফা আক্ষেপের সঙ্গে জানান, স্বামীর একার আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। সে কারণেই একটু ভালোভাবে সংসার চালানোর আশায় কাজ নেন পোশাক কারখানায়। চাকরি নেওয়ার পর ভালই চলছিল সংসার। তবে রানা প্লাজার ধ্বসে তার স্বপ্ন এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন অন্যের উপর বোঝা হয়ে বেঁচে থাকার চাইতে মৃত্যুও ভালো বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
রানা প্লাজার মৃত্যুকুপ থেকে বেচে যাওয়া আরেক শ্রমিক শিলা বেগম। কাজ করতেন রানা প্লাজার ছয়তলার ইথার টেক্স কারখানায় অপারেটর পদে। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি কারখানাটিতে কাজ করছিলেন। ভালই চলছিল তার সংসার। কিন্তু আচমকা রানা প্লাজা ধ্বসে তার সব শেষ হয়ে যায়।
ভবনের বিমের নিচে চাপা পড়েন তিনি। প্রায় ১৮ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমদিকে কিছু টাকা পেলেও সেই টাকায় তার চিকিৎসাও ঠিকমতো হয়নি। টাকার অভাবে সন্তানের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো রকম দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি। তবে টাকার অভাবে এখন তার চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে।
এছাড়াও শিউলি ও তাজুল ইসলামসহ রানা প্লাজার আহত অনেক শ্রমিক ধ্বংস্তুপ থেকে বেচে ফিরলেও প্রতিনিয়ত ভুগছেন মানসিক যন্ত্রণায়। পরিবারের অন্য সদস্যের উপর নির্ভর হয়ে বেচে থাকতে হচ্ছে তাদের। বেচে থেকেও দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে তারা।