Thursday, March 20, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

ঈদের বাজারে নতুন জামা কাপড়-জুতার দামে নৈরাজ্য

বাংলাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া আর কোনো পণ্যের দাম নির্ধারণের স্বীকৃত কোনো পদ্ধতি নেই। উৎপাদনকারী ও বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করেন। আর এ কারণেই ঈদের বাজারে নতুন জামা কাপড়-জুতার দামে চলছে নৈরাজ্য

আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২২ পিএম

বাংলাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া আর কোনো পণ্যের দাম নির্ধারণের স্বীকৃত কোনো পদ্ধতি নেই। উৎপাদনকারী ও বিক্রেতারা তাদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করেন। আর এ কারণেই ঈদের বাজারে নতুন জামা কাপড়-জুতার দামে চলছে নৈরাজ্য।

শুধু তাই নয়, আগের দামের ট্যাগের ওপরেই দাম বাড়িয়ে নতুন ট্যাগ লাগিয়ে পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে। এই অভিযোগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর। আর কথা বলে জানা গেছে মূল্য হ্রাস বা ডিসকাউন্ট-এর বিষয়টি অনেকাংশেই ভুয়া।

এটা হলো দাম বাড়িয়ে দিয়ে আগের দামে বা তার চেয়েও বেশি দামে বিক্রির কৌশল। একজন ব্যবসায়ী উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যে পাঞ্জাবির দাম আগে ছিলো দুই হাজার টাকা তাতে চার হাজার টাকার ট্যাগ লাগিয়ে শতকরা ৫০% ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়।

ফ্যাশন হাউজ রিচম্যান ও লুবনানের মুনীরুল হক জানান, তারা যে পাঞ্জাবি বিক্রি করেন তা প্রতিটি দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকা দামের। তারা মূল্য নির্ধারণ করেন ফেব্রিক, ডিজাইন, দোকানের ভাড়া, কর্মচারীর বেতন এগুলো বিবেচনায় নিয়ে। সব খরচ বাদ দিয়ে তার শতকরা ২০-৩০% লাভ ধরে পোশাকের দাম নির্ধারণ করেন। তবে এর ওপর সরকারের বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো মনিটরিং নেই। তাদের ৮০% ফেব্রিক বাংলাদেশি। বাকিটা আমদানি করেন।

তিনি দাবি করেন, “আমরা যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করি। তবে কেউ কেউ আছেন অনেক বেশি দাম নেন। সেটা নিয়ন্ত্রণের কোনো কর্তৃপক্ষ নেই।”

বাংলাদেশের যে কাপড় সেই কাপড়ের একটি পাঞ্জাবির দাম ২০-২২ হাজার টাকা কীভাবে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ডিজাইনের একটা বড় খরচ আছে। আবার বসুন্ধরা সিটি যদি হয় তাহলে দোকানের ভাড়া স্কয়ার ফুট হিসেবে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। তারপরও দাম নির্ধারণে সরকারের একটি সিস্টেম থাকলে ভালো হতো।”

তার কথা, “যদি একটি জায়গা থাকত যে আমরা আমাদের উৎপাদিত পোশাকের ডিজাইনসহ উৎপাদন খরচ এবং লাভ ধরে দাম সেখানে পাঠিয়ে দিতাম। তারা দৈব চয়নের ভিত্তিতে এগুলো চেক করতেন, তাহলে নিয়ন্ত্রণে থাকত।”

ঈদের বাজারে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাকের বেশ কদর আছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা নামের ওইসব পোশাকের প্রকৃত দাম ক্রেতার পক্ষে ধারণা করা সম্ভব নয়। যে যেভাবে দরাদরি করে কিনতে পারেন। আর বিক্রেতারাও তাদের ইচ্ছেমত দাম হাঁকেন। আবার ফিক্সড প্রাইস বলে যেসব দোকান পোশাক বিক্রি করে তারাও তাদের ব্র্যান্ডের কারণে ওই সুবিধা নেয়।


বাংলাদেশে পণ্যের দাম নির্ধারণের স্বীকৃত কোনো পদ্ধতি নেই/ ফাইল ছবি/ঢাকা ট্রিবিউন 

বিবিয়ানার থ্রিপিস দুই হাজার টাকা থেকে ছয়-সাত হাজার টাকা দামের। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান লিপি খন্দকার বলেন, “আমরা সর্বোচ্চ শতকরা ২০% লাভ ধরে দাম নির্ধারণ করি। এর বেশি ব্যবসা করা যায় না।”

তবে তার কথা, দেশের ফেব্রিক ব্যবহার করলে একটি পাঞ্জাবির দাম ১৬-১৭ হাজার টাকা হতে পারে না। তবে ডিজাইন, ব্র্যান্ড আরও অনেক বিষয় থাকে।

ক্রেতা ভালো মানের পোশাক চিনবেন কীভাবে, কাপড়ের মান যাচাই করবেন কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটা তো দেখে বুঝবেন, অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝবেন।” ভারত ও পাকিস্তানের পোশাকের প্রকৃত দাম বোঝা আসলেই জটিল বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক মো. হেলাল উদ্দিন নিজেও স্বীকার করেন যে জামা কাপড়, জুতা, প্রসাধনের দাম অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে। তিনি নিজেও এর শিকার। তিনি বলেন, “দেশি ব্র্যান্ডের এক জোড়া জুতা কিনতে গিয়ে দেখি দাম ১৫ হাজার টাকা। এটা কীভাবে সম্ভব!”

তিনি মনে করেন, “এর একটা মনিটরিং থাকা দরকার। আর ক্রেতাকেও সচেতন হতে হবে। কেনার প্রতিযোগিতা নয়, প্রকৃত দামে কিনতে হবে।”

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি নাজের হোসেন বলেন, “আমরা বেশ কয়েকবার এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আমরা অনুসন্ধানে দেখেছি, এক হাজার টাকায় একটি পাঞ্জাবি কিনে শো রুমে তুলে ১০ হাজার টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদের সময় এটা বেশি হয়। শাড়িসহ অন্যান্য পোশাকের ক্ষেত্রেও এটা ঘটছে৷ তাই এটা নিয়ন্ত্রণ নয়, মনিটরিং করা প্রয়োজন। এসেনশিয়াল প্রডাক্ট-এর জন্য আলাদা আইন আছে। তবে ভোক্তা অধিকার আইনে এটা মনিটরিং করার সুযোগ আছে। আর একটু অনুসন্ধান করলেই অতিরিক্ত দাম নিলে সেটা বের করে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব।”

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলি আহাদ খান জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চাল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি এরকম ১৭টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে। কিন্তু জামা, জুতা এগুলো আপনাকে দেখেই কিনতে হবে। তবে কেউ যদি অস্বাভাবিক দাম নেয় সেটা দেখার দায়িত্ব ভোক্তা অধিদপ্তরের।”

তিনি বলেন, “কোনো আইন নাই তবে আমরা শতকরা ২০-৩০% লাভকে স্বাভাবিক লাভ হিসেবে বিবেচনা করি।”

আমদানি করা এই ধরনের পণ্যের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে কী না তা ধরা সহজ। তবে দেশীয় পণ্যের অতিরিক্ত দামও একটু অনুসন্ধান করলেই চিহ্নিত করা যায় বলে মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য জানতে বার বার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।


   

About

Popular Links

x