দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ-উল-ফিতর। ঈদকে কেন্দ্র করে টানা ৯ দিনের ছুটিতে জল, স্থল ও আকাশপথে ঢাকা ছাড়ছেন লাখো মানুষ। গত কয়েকদিন ধরে চলমান এই যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
ফ্লাইটের সময়সূচি বিঘ্নিত হওয়া থেকে শুরু করে আনুষঙ্গিক সেবা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। চেক-ইন কাউন্টারে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি ছাড়াও ইমিগ্রেশন ও বোর্ডিং ব্রিজেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের।
বরিশালগামী বেলাল হোসেন সড়কের যানজট এড়াতে বিমানপথে ভ্রমণের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তারপরও তাকে দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পাশাপাশি নানান ঝামেলা পোহাতে হয়েছে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষারত হতাশ বেলাল হোসেন বলেন, “অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে চেক-ইন কাউন্টার পার হওয়ার পর জানতে পারলাম ফ্লাইটের প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরি হবে।”
দুবাই থেকে ঢাকায় ঈদ করতে আসা মায়া আক্তার মিম বৃহস্পতিবার সপরিবারে ঢাকা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছেন।
“ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করার পর, আমরা আমাদের লাগেজ নেওয়ার জন্য গাড়ি খুঁজছিলাম কিন্তু সেখানেও বিশাল লাইন ছিল। শেষ পর্যন্ত গাড়ি ভাড়া করার জন্য আমাদের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে হেঁটে যেতে হয়,” তিনি ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার ফ্লাইট শিডিউল আবার চালু হলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের চাপ এবং যাত্রী ভোগান্তি কমবে।
বর্তমানে, তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ এবং ট্যাক্সিওয়ের লাইটিংয়ের কাজ চলমান থাকায় মধ্যরাত থেকে আট ঘণ্টা ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আবার ২৪ ঘণ্টা ফ্লাইট অপারেশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
ঢাকা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলার সময়, বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম দাবি করেন, ঈদের ছুটিতে প্রচণ্ড ভিড় মোকাবেলায় প্রতিটি সেক্টর প্রস্তুত।
তবে, ১৬ ঘণ্টার ফ্লাইট শিডিউলের কারণ যাত্রীদের ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আসতে হচ্ছে এবং এ কারণে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিপুল ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, তিনি জানান।
এছাড়া, ঈদ উপলক্ষে দেশের তিনটি এয়ারলাইন্সই অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে ফলে চাপও বাড়ছে।
তিনি আরও জানান, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
দিনে ৮০ থেকে ৯০টি ফ্লাইট
বর্তমানে, প্রায় ৪০টি অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ফলে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার যাত্রী ঢাকা বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত করছে বলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ (বেবিচক) জানিয়েছে।
বেবিচকের ধারণা, ঈদের ভিড়ের কারণে আগামী সাত দিন যাত্রী সংখ্যা ১৬ থেকে ১৮ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রায় ১১টি ফ্লাইট দুই ঘণ্টার মধ্যে উড্ডয়ন করেছে বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে।
বেশ কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেছেন, জনবলের অভাব, অতিরিক্ত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সুবিধা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবার কারণে বিমানবন্দরে তাদের সময় নষ্ট হয়েছে।
তারা আরও জানান, টার্মিনালের ভেতর-বাইরে এবং বিমানবন্দরের সর্বত্রই অব্যবস্থাপনার চিহ্ন রয়েছে।
বিমানবন্দরে বর্তমানে চারটি গাড়ি ভাড়া সংস্থা কাজ করছে, তবে প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে গাড়ির সংখ্যা এখনও কম।
বেড়েছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট
ঈদের ছুটির কথা মাথায় রেখে প্রতিটি দেশীয় অপারেটর তাদের ফ্লাইট প্রায় ১০% বাড়িয়েছে।
নভোএয়ার সৈয়দপুর, যশোর ও বরিশাল রুটে দুটি এবং রাজশাহী রুটে তিনটি ফ্লাইট বাড়িয়েছে। ২৯টি ফ্লাইটে প্রতিদিন মোট ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ জন যাত্রী বহন করা হয়।
ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স রাজশাহী রুটে তিনটি এবং সৈয়দপুর রুটে দুটি ফ্লাইট বাড়িয়ে প্রতিদিন ৩৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করে প্রায় ২ হাজার ৬০০ যাত্রী পরিবহন করছে।
অন্যদিকে, যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ সব রুটে দু-একটি ফ্লাইট বাড়িয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও।