“মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই
ইহার চেয়ে নামটি মধুর তিন ভূবনে নাই”
কবি কাজী কাদের নেওয়াজ তার “মা” কবিতাটি এভাবেই শুরু করেছিলেন। মা-কে নিয়ে এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে লেখা হয়েছে অসংখ্য স্তুতিবাক্য, গান, কবিতা। জননীর অতুলনীয় ভালোবাসাকে স্মরণ করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কৃষক এনামুল হক ধানক্ষেতে একটি চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তুলেছেন।
শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের বেকাসাহরা গ্রামে বাড়ি এই কৃষকের। বরমী-সাতখামাইর-মাওনা সড়কের পাশে বেগুনি ও ব্ল্যাক রাইস জাতের সবুজ রঙের ধানের চারায় তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন “মা” শব্দটি। তার এই অনন্য কাজটি দেখতে ভিড় জমছে অসংখ্য মানুষের।
এর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শস্যচিত্রে রাজনৈতিক নেতা, সেতু ইত্যাদির চিত্রকর্ম দেখা গেলেও ‘‘মা’’ লেখাটি দেখা যায়নি।
মায়ের প্রতি এনামুলের ভালোবাসা অগাধ। অর্ধযুগেরও বেশি সময় আগে তার বাবা মারা যান। ছোটবেলা থেকে মাকেই বেশি কাছে পেয়েছেন।
এনামুল মনে করেন, “মাকে ভালাবাসলে কোনো সন্তান তার কথার অবাধ্য হবে না। অবাধ্য না হলে সেই সন্তান কখনো খারাপ পথে যাবে না, মাদক নেবে না। জননীর কথা শুনলে সন্তানের মঙ্গল হয়।”
জননীর প্রতি এই ভালোবাসা থেকে তার ইচ্ছে হলো ফসলের মাঠে বড় করে “মা” লিখবেন।
সেজন্য বেগুনি ও ব্ল্যাক রাইস জাতের সবুজ ধানের বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা প্রস্তুত করা হয়। পরে বীজতলার চারা দিয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ নেন।
প্রথমে এনামুল সুতা টেনে “মা” লেখার কাঠামো প্রস্তুত করেন। এরপর রোপণ করা হয় ব্ল্যাক রাইস জাতের সবুজ রঙের ধান। চারপাশ ঘিরে দেওয়া হয় বেগুনি ধানের চারা দিয়ে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চারাগুলো বড় হয়ে “মা” লেখাটি ক্রমশ ফুটে উঠতে শুরু করে।
ঢাকা ট্রিবিউনকে তিনি জানান, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন এ কাজে তাকে সরাসরি পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এজন্য তিনি প্রায় ৫০ শতক জমি ভাড়া নিয়েছেন।
এনামুলের মা জোহরা বেগম (৬৫) জানান, ছেলের এ কাজের কথা তিনি জানতেন না।
জোহরা বেগম স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তাকে চলাচলে সহায়তা থেকে শুরু করে পোশাক পরা, গা মুছে দেওয়া এসব কাজে ছেলেই সহায়তা করেন।
ছেলের ভালোবাসায় আপ্লুত এই নারীর আশা, পৃথিবীর সব সন্তান যেন মা’কে এভাবেই ভালবাসে এবং যত্ন করে।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা থেকে ধান গাছে এনামুলের চিত্রকর্ম দেখতে এসেছেন মাধ্যমিক শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার দুই বন্ধু।
ইমতিয়াজ বলেন, অনলাইনের এ দুনিয়ায় কোনো কিছুই চাপা থাকে না। আমরাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনে এনামুল হকের কাজটি দেখতে এসেছি। মায়ের প্রতি তার ভালোবাসাটা এখানে ফুটে উঠেছে।
পার্শ্ববর্তী গ্রাম টেপিরবাড়ীর বাসিন্দা সেলিম বলেন, ধানের চারায় মা লেখাটি খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। এটি দেখতে তিনিও বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন।
ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিন বরমী-সাতখামাইর-মাওনা সড়কে চলাচল করেন আতিক হাসান। ঢাকা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, আসা-যাওয়ার পথে যতবার চিত্রকর্মটি দেখি, ততোই মায়ের প্রতি ভালোবাসা বাড়তে থাকে। আমার মতো অসংখ্য মানুষ সরাদিন এ দৃশ্যটি দেখতে আসেন। অনেকে সেলফি তোলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এটি এখন আমাদের এলাকায় একটি আলোচিত ঘটনা।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ধানের চারায় চিত্রকর্মটির মূল পরিকল্পনাকারী কৃষক এনামুল। তিনি শুধু বাস্তবায়নের জন্য আমাদের সহযোগিতা নিয়েছেন। অসম্ভব এক সৃষ্টিকর্মের প্রতিফলন দেখিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে এরকম আরও কিছু করার ইচ্ছাও রয়েছে তার।”