আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণ করা ব্যক্তিদের চেনেন না বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম।
রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিনা টিকেটে রেল ভ্রমণের কারণে তাদেরকে জরিমানা করায় রেলের একজন কর্মীকে শাস্তি দেওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হবার পর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, ওই তিনজন তার আত্মীয় কিনা, তা তিনি জানেন না।
রেলমন্ত্রী জানান, যাত্রীদের কাছ থেকে “অসাদাচরণের” লিখিত অভিযোগ পেয়ে ওই রেলকর্মীকে বরখাস্ত করা হয়।
এদিকে, শনিবার (৭ মে) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী বলেন, “ঘটনাটি শনিবার সকালেই শুনেছি। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি, ওই টিটিই বিনা টিকিটের যাত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করেছেন। সে কারণেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে”
রেলের দাপ্তরিক কার্যক্রমের সঙ্গে মন্ত্রীর কোনো সংযোগ নেই জানিয়ে নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, “ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো আত্মীয় জড়িত নন। রেল কর্মকর্তারা ওই টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না”
তিনি বলেন, “বিনা টিকিটের যাত্রী যদি মন্ত্রীর আত্মীয়ও হয় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। একইভাবে কোনো রেল কর্মকর্তা যদি যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, তাকেও শাস্তি পেতে হবে। যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার কারণে টিটিইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
রেলমন্ত্রী আরও বলেন, “মাঝেমধ্যেই টিটিইরা বিভিন্নভাবে যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন, বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। তবে লোকবল সংকটের কারণে আমরা এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে একেবারেই ছাড় দিলে রেলের দুর্নাম হয়ে যায়। তাই টিটিইদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
রেলের একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে তিন যাত্রী বিনা টিকিটে খুলনা থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে উঠেছিলেন। বিনা টিকিটে এসি কেবিনে ঢাকা যাওয়ার সময় কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে নিজেদের পরিচয় দেন।
টিটিই শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নুরুল আলমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে এসি টিকিট না করিয়ে সাধারণ কোচের টিকিট কাটার পরামর্শ দেন।
এসিওর পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই তাদের ৩৫০ টাকা জনপ্রতি হিসেবে ১০৫০ টাকা নিয়ে তিনটি সুলভ শ্রেণির নন-এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট দেন। এ সময় ট্রেনে কর্তব্যরত অ্যাটেনডেন্টসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই তিন ট্রেনযাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো অভিযোগ না করলেও ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। টিটিই শফিকুল ইসলামকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানানো হয়।
ডিসিও নাসির উদ্দিন বলেন, “বিনা টিকিটধারী ওই তিন ট্রেনযাত্রীর সঙ্গে কর্তব্যরত টিটিই অসদাচরণ করেছেন বলে রেলের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মুঠোফোনে অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি আমাকেও জানানো হলে শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।”
সাময়িক বরখাস্ত টিটিই শফিকুল ইসলাম বলেন, “বরখাস্তের বিষয়টি আমি ট্রেনে ডিউটিরত অবস্থায় মোবাইল ফোনে জানতে পেরেছি। রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়ায় আমি তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এসিওর পরামর্শ মতো ব্যবস্থা নিই। তাদের সঙ্গে কোনোরকম অসদাচরণ করিনি।”