রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের “আত্মীয়” পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণের সময় জরিমানার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় আত্মীয় পরিচয়ে কেউ বাড়তি সুবিধা চাইলেও তা না দিতে রেলকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (৮ মে) জারি করা এক আদেশ এমন নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। নির্দেশনাটি রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক, সকল স্টেশনের ম্যানেজার, স্টেশন মাস্টার ও ট্রেনের পরিচালককে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন- রেলমন্ত্রী: আমার স্ত্রী বুঝে উঠতে পারেনি আমি কী ধরনের মানুষ
রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আতিকুর রহমানের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, “সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, রেলপথমন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের অগোচরে তাদের রেফারেন্সে আত্মীয়/ পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্টেশনে টিকেট দাবি করা, ট্রেনে উঠে বিশেষ সুবিধা চাওয়া হচ্ছে।”
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, “এছাড়া অনেকেই মন্ত্রীর একান্ত সচিব, সহকারী সচিব এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে রেলের পরিচালকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করছেন।”
আরও পড়ুন- রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ফোনেই বরখাস্ত হন টিটিই
“এসব বিষয় জানার পর তা রেলপথ মন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। এ ধরনের সুবিধা যারা চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এবং যেসব মোবাইল নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে সেই নম্বরগুলো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে পাঠিয়ে ওই ব্যক্তিদের সঠিক পরিচয় জানার নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় মন্ত্রী।”- বলা হয় আদেশে।
নির্দেশনায়, এসব ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত না হয়ে দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া কোনো কার্যক্রম গ্রহণ না করতে বলা হয়েছে রেল কর্মকর্তাদের।
এর আগে, গত ৫ মে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশন থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয় দেওয়া তিন যাত্রী। তারা হলেন, মন্ত্রীর স্ত্রীর বোনের ছেলে ইমরুল কায়েস প্রান্ত ও তার চাচাত ভাই ওমর ও হাসান। তাদের কাছে টিকিট না থাকলেও খুলনা থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে যাওয়া সুন্দরবন এক্সপ্রেসের এসি কেবিনের আসন দখল করেন। তখন কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় বলে নিজেদের পরিচয় দেন।
আরও পড়ুন- রেলমন্ত্রীর ‘শালা বা সম্বন্ধীর ছেলে’ ও একজন টিটিই
টিটিই শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নুরুল আলমের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে এসি টিকিট না করিয়ে সাধারণ কোচের টিকিট কাটার পরামর্শ দেন।
ওই তিন ট্রেনযাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো অভিযোগ না করলেও ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। টিটিই শফিকুল ইসলামকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানানো হয়।
শফিকুল ইসলামকে বরখাস্তের পর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে শনিবার নূরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের জানান, বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীদের সঙ্গে তার কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এরপর আজ রবিবার তিনি জানান, টিকিট ছাড়া ভ্রমণ করা যাত্রীরা যে তার আত্মীয়, তা তিনি জানতেন না। গণমাধ্যম থেকে ফোন করার পর জানতে পেরেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসে রেলমন্ত্রী সুজন টিটিই শফিকুলকে বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের কথা জানান। তিনি তখন বলেন, “শফিকুল সেদিন দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করছিলেন।”
আরও পড়ুন- বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা রেলমন্ত্রীর ‘আত্মীয়’কে জরিমানা, অতঃপর টিটিই বরখাস্ত
এ বিষয়ে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তার স্ত্রী ফোন করেছিলেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমার স্ত্রী অভিযোগ দিয়েছে যে, এদের সঙ্গে (বিনা টিকিটের যাত্রীদের) ভালো ব্যবহার করা হয়নি।”
সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে কি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সেই প্রেক্ষিতে করেছে কি-না, সে জন্যই তো শোকজ করছি আমরা। এখনও তো ডিসিওর বক্তব্য আমরা পাইনি।”
স্ত্রীর এমন কাণ্ডে দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমি ১২ বছর ধরে এমপি, আমার একটা ক্যারিয়ার আছে। নয় মাস হলো বিয়ে করেছি, শ্বশুর বাড়ির আত্মীয় এমনকি আমার নতুন স্ত্রীও বুঝে উঠতে পারে নাই আমি কী ধরনের মানুষ।”