কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় আলোচিত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পিকে হালদার) গ্রেপ্তারের ঘটনায় হাইকোর্ট বলেছেন, আমাদের বিভিন্ন আদেশের কারণেই পি কে হালদার আজ সারা বিশ্বে অন্যভাবে আলোচিত এবং অর্থপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত। আমরা এমন আদেশ দেবো, পি কে হালদার ও অন্য অর্থপাচারকারীরা পৃথিবীর কোথাও শান্তিতে থাকতে পারবে না।
মঙ্গলবার (১৭ মে) পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে চাওয়া রুল শুনানির সময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন।
রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, আপনারা শুধু নির্দিষ্ট করে দিন অর্থপাচারকারীরা কোথায় আছেন, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেবো।
আরও পড়ুন- আরও ১০ দিনের রিমান্ডে পিকে হালদার
পরে আদালত পিকে হালদারকে গ্রেপ্তার ও দেশে ফিরিয়ে আনতে জারি করা রুল শুনানির জন্য আগামী ১২ জুন দিন ধার্য করেন।
এছাড়া, এ সময়ের মধ্যে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলার তথ্য জানাতে দুদককে নির্দেশ দেন আদালত।
আরও পড়ুন- ‘পিকে হালদারের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জনগণের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে'
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।
গত ১৪ মে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পিকে হালদার ও তার কয়েক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে ভারতের ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট (ইডি)। পরের দিন আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে ৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে পিকে হালদারকে আরও ১০ দিনের রিমান্ডে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- কবে নাগাদ পিকে হালদারকে ফেরানো যাবে, নিশ্চিত নয় দুদক
গ্রেপ্তারের পর ইডি সাংবাদিকদের জানায়, বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পর শিবশঙ্কর হালদার নামে ভারতীয় নাগরিকের সনদ যোগাড় করেন পিকে হালদার। পশ্চিমবঙ্গের নকল রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, আধার কার্ডও তৈরি করান পিকে। সেই সঙ্গে তার নামে ছিল গ্রেনাডার পাসপোর্টও।
সংস্থাটি আরও জানায়, পিকে হালদার এবং তার সহযোগীরা পশ্চিমবঙ্গে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করছেন। প্রচুর অর্থ ব্যয় করে কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় নকল নাগরিক সনদ দেখিয়ে জমি কিনেছেন। সোমবার ভারতে গ্রেপ্তারে হওয়ার বিষয়টি হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। পরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় ওঠে।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশ-ভারতের পাশাপাশি গ্রেনাডার পাসপোর্টও ছিল পিকে হালদারের
পিকে হালদার ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। ভারত সরকারের তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তার বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল বাড়ি ও কয়েকশ বিঘা মূল্যবান সম্পত্তির সন্ধান পেয়েছে। একইসঙ্গে কলকাতা ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলায় বেআইনি আর্থিক লেনদেন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিস মিলেছে।