Friday, April 18, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

চট্টগ্রামে শিশু আরাফ হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

২০২০ সালের ৬ জুন বিকেলে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে দুই বছর বয়সী শিশু আরাফকে হত্যা করা হয়

আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ০৪:১৮ পিএম

চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় শিশু আবদুর রহমান আরাফ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১৮ মে) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জসিম উদ্দিন আসমিদের উপস্থিতিতে এই রায় দেন। রায়ের পর আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত তিন আসামি হলেন- চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরের মো. ফরিদ, শিশু আরাফের পরিবার যে ভবনে ভাড়া থাকত সেই ভবনের দারোয়ান মো. হাসান ও তার মা নাজমা বেগম।

আদালতের এপিপি প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য জানান, গত ৩০ মার্চ এ মামলায় রায় ঘোষণার দিন নির্ধারিত থাকলেও সেদিন বিচারকের ব্যস্ততার কারণে তা পিছিয়ে ২৮ এপ্রিল নতুন দিন ঠিক করা হয়েছিল। তবে মামলার এক আসামি শিশু আরাফের বাবা-মায়ের ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করলে রায় পিছিয়ে যায়। সেই আবেদন নাকচ করে বুধবার তিন আসামির সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচারক রায় দিয়েছেন।

২০২০ সালের ৬ জুন বিকেলে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে দুই বছর বয়সী শিশু আরাফকে হত্যা করা হয়েছিল। ওইদিন বিকেলে মিয়াখান নগরে ভবনের সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় খেলছিল শিশু আরাফ। মায়ের কাছে চানাচুর খাওয়ার পর সে পানি খেতে চাইলে আরাফের মা ফারহানা ইসলাম পানি আনতে ঘরের ভেতরে যান।তিনি ফিরে এসে দেখেন সেখানে তার ছেলে নেই।

এ ফাঁকে নাজমা বেগম আদর করার ছলে আরাফকে নিয়ে ভবনের ছাদে চলে যান। সেখানে পানির ট্যাংকে ফেলে আরাফকে হত্যা করা হয়।

হত্যার পর নাজমা বেগম, তার ছেলে হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ ঘটনায় তাদেরকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। ২০২১ সালের ১০ মার্চ এ মামলার চার্জশিট হয়েছিল। ঘটনায় ২০ জন সাক্ষী দিয়েছেন। আসামিপক্ষে ১০ জনের সাফাই সাক্ষ্য হয়েছে। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন।

জবানবন্দিতে নাজমা বেগম জানান, ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে পানির ট্যাংকে ফেলে আরাফকে হত্যা করেছেন। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে হাসান গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করেছিলেন।

১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ওই ভবনের মালিক। তাকে মামলায় ফাঁসাতে ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করার বিনিময়ে নাজমাকে ২০ হাজার টাকার লোভ দেখান ফরিদ।

ফরিদ ছিলেন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী। ঘটনার আগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও ভবন মালিক নুরুল আলম মিয়ার প্রচারে হামলার ঘটনায় ফরিদকে আসামি করা হয়েছিল বলে তিনি ক্ষুব্ধ ছিলেন।

বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আবদুল কাইয়ুম ও গৃহিনী ফারহানা ইসলাম দম্পতির একমাত্র সন্তান ছিল আরাফ। ছেলে হারানো মা-বাবার দাবি ছিল, তাদের সন্তানের হত্যাকারীদের যেন সর্বোচ্চ সাজা হয়।

আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আরাফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, তিন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এখন আমরা এই রায় দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। এই রায় যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। কোনো মা-বাবা যেন আমার মতো আর সন্তানহারা না হয়। আমাদের মতো যেন কেউ আঘাত না পায়।

   

About

Popular Links

x