চাঁদা দাবির ঘটনায় মাস তিনেক আগে থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন মো. আইমন (১৮)। তবে দিনশেষে সেটাই কাল হলো এ তরুণের জন্য। থানায় যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, সেই ব্যক্তি এবং তার সহযোগীদের হাতে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে খুন হতে হয়েছে তাকে।
শনিবার (২১ মে) রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী বাজারে হোসেন মার্কেটের সামনে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নিহত আইমন চৌমুহনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গণিপুরের নুর নবীর ছেলে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে আইমন ছিলেন চতুর্থ। তিনি চৌমুহনী বাজারে প্রধান সড়কের পাশে খোলা জায়গায় জুতা বিক্রি করতেন।
হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই তিন যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- চৌমুহনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. রাকিব (২০), মো. পাভেল (২১) এবং নীরব (২০)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাজীব। তিনি বলেন, “তিন মাস আগে স্থানীয় সন্ত্রাসী রাকিব তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আইমন এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে রাকিব ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তিন মাস কারাগারে থাকার পর রাকিব গত বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্তি পান।”
নাজমুল হাসান রাজীব জানান, শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রাকিব তার দুই সহযোগী পাভেল ও রিমনকে নিয়ে চৌমুহনী বাজারে আইমনের পথ আটকায়।
তিনি আরও বলেন, “রাকিব তার কারাভোগের জন্য আইমনকে দায়ী করে। এক পর্যায়ে তিনজন মিলে আইমনকে ছুরি মেরে জখম করে। বাঁচার জন্যে সে পাশের একটি ফার্মেসিতে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়েও তারা আইমনের গলার নিচে ছুরি মেরে জখম করে। কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়।”
তবে শুধু আইমনকে হত্যা করেই রাকিব আর তার সহযোগীরা ক্ষান্ত হয়নি। আইমনকে প্রকাশ্যে হত্যার পর হাতবোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে চৌমুহনী বাজারের ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ শুরু করেন এবং প্রায় আধা ঘণ্টা চৌমুহনী-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরবর্তীতে পরে আটিয়াবাড়ি পুল এলাকা থেকে রাকিবসহ ওই তিন যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আইমনের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পরিবারের সদস্যরা খুনিদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। আইমনের মা ইতোমধ্যে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাজীব জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য আইমনের মরদেহ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধেই থানায় বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “চৌমুহনী বাজারে দোকানদারদের কাছে চাঁদা দাবি এবং চাঁদা আদায়ের মত ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে এবং কারা এই চাঁদাবাজদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে- এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তে যাদের নাম বেরিয়ে আসবে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।”