নীলফামারীর ডোমারে সিয়াম আহমেদ (১২) নামে এক স্কুলছাত্রকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার জেরে বাগ্বিতণ্ডা হলে ভুক্তভোগী শিশুটির বাবার বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশে দিয়েছেন আনিছুজ্জামান।
সোমবার (২০ জুন) কৃষি কর্মকর্তার মারধরে আহত সিয়াম উপজেলার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ছোটরাউতা ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মোফাজ্জল হোসেন মোফার ছেলে। সে বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রের স্বজন ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে রাহাত মাহমুদ মৃন্ময়ের সঙ্গে উপজেলা হেলিপ্যাড মাঠে সাইকেল চালানোর সময় পঞ্চম শ্রেণির আরেক ছাত্রের মারামারি হয়। তারা দুজনই উপজেলা পরিষদ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে দুই শিশুর মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। ঘটনাটি মৃন্ময়ের মায়ের চোখে পড়লে তিনি মাঠে গিয়ে সিয়ামকে মারধর করেন এবং টেনে-হিঁচড়ে তাদের কোয়ার্টারের দিকে নিয়ে যান।
এরপর তিনি বিষয়টি তার স্বামী কৃষি কর্মকর্তা মো. মো. আনিছুজ্জামানকে ফোন করে জানান। খবর পেয়ে আনিছুজ্জামান অফিস থেকে কোয়ার্টারের সামনে এসে সিয়ামকে মারধর শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি মাটিতে ফেলে শিশুটির বুকে লাথি মারতে থাকেন। স্কুল মাঠে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী এগিয়ে এসে কারণ জানতে চাইলে কৃষি কর্মকর্তা তাদেরও মারধর করেন।
এ সময় স্থানীয়রা সিয়ামকে উদ্ধার করে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
ঢাকা পোস্ট বলছে, এ ঘটনার জেরে ওইদিন সন্ধ্যায় সিয়ামের বাবা মোফাজ্জল হোসেন প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলা পরিষদে কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। তিনি কৃষি কর্মকর্তার কাছে ছেলেকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে তাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে সেখানে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এ সময় থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সময় সিয়ামের বাবা মোফাকে আটক করে পুলিশ। ওইদিন রাতেই কৃষি কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ ও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, অফিসে ঢুকে কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার অভিযোগে থানায় মামলা করেন।
ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রের মা স্বপ্না আক্তার জানান, সিয়াম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তার খাদ্যনালী চিকন হয়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
“আমার ছেলে ভুল করলে তিনি আমাকে জানাতে পারতেন। আমি তাকে শাসন করতাম। কিন্তু তিনি এসে আমার অসুস্থ ছেলের বুকে লাথি মারেন।”
তিনি আরও বলেন, “একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে এমন জঘন্য কাজ কীভাবে করেন তিনি? আবার উল্টো তিনি আমার স্বামীসহ এলাকার লোকজনের নামে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দিয়েছেন।”
স্বপ্না বলেন, “আমার ছেলেকেই মারলো আবার উল্টো কৃষি কর্মকর্তার মামলায় আমার স্বামী হাজতে গেল। আমরা গরিব বলে কি বিচার পাবো না? আমার অসুস্থ ছেলে হাসপাতালে আর আমার স্বামী হাজতে। এখন আমি কী করব?”
প্রত্যক্ষদর্শী মুন্না ইসলামের ভাষ্য, “আমি কৃষি কর্মকর্তার কাছে সিয়ামকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে তিনি আমার কলার চেপে ধরে, ‘উপজেলায় কোনো ডাঙ্গাপাড়ার লোক আসতে পারবে না’ বলে হুমকি দেন।”
ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডা. নাহিদা বলেন, ‘‘শিশুটির গায়ে ও বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে সুস্থ আছে।’’
সরকারি কর্মকর্তার মারধরের শিকার শিশু সিয়াম জানায়, ‘‘আমি বিকেলে সাইকেল নিয়ে মাঠে গেলে আমাকে দেখে মৃন্ময় বলে যারা সাইকেল চালায় তারা মেথর। তাদের কেউ দেখতে পারে না। তখন আমি বললাম আমি তো সাইকেল চালাই, তাই বলে আমি কি মেথর? মৃন্ময়কে ‘ভালো হয়ে যাও’ বলায় সে আমাকে মারধর করে। আমিও গায়ে হাত তুলি। পরে আন্টি এসে আমাকে মারতে মারতে তাদের বাসার সামনে নিয়ে যান।’’
‘‘পরে আন্টি আঙ্কেলকে ফোন করলে তিনিও এসে আমাকে মারেন এবং মাটিতে ফেলে আমাকে বুকের ওপরে পা তুলে দেন। আমি জোড়হাত করে বলি, আঙ্কেল আমার ভুল হয়ে গেছে আমাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু উনি মারতেই থাকেন।’’
এ ব্যাপারে ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাছাড়া, এটি ডোমার উপজেলা পরিষদের বিষয়। তারা বসে হয়ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রমিজ আলম বলেন, ‘‘স্কুলছাত্র সিয়ামকে মারধরের বিষয়টি জানা নেই। সোমবার সন্ধ্যায় অফিসে এসে কিছু লোক হামলা করে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, কৃষি কর্মকর্তার করা মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।