সারাদেশে ৮৫টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। সিলগালা করা হাসপাতালগুলোর মধ্যে রয়েছে খুলনা বিভাগের যশোর, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গায় ১৬টি, ফরিদপুরে ২০টি, টাঙ্গাইলে ১৭টি, নাটোরে ৭টি, কুষ্টিয়ায় ৫টি, চাঁদপুরে ৪টি, জামালপুরের বকশীগঞ্জে ৪টি, ধামরাইয়ে ৪টি, মৌলভীবাজারে ৩টি, রাজবাড়ীতে ২টি, বগুড়ায় ২টি ও ভোলায় একটি।
শনিবার (২৮ মে) স্থানীয় প্রশাসন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) নির্দেশনা অনুসরণ করে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়।
এর আগে, বুধবার অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবিরের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর মনিটরিং ও সুপারভিশন বৃদ্ধির বিষয়ে কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে (রবিবার পর্যন্ত) দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে হবে। অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করলেও নবায়ন করেননি, তাদের নিবন্ধন নবায়নের জন্য সময়সীমা দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নবায়ন না করলে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে অপারেশনের সময় অ্যানেস্থিশিয়া প্রদান ও ওটি অ্যাসিস্ট করার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া অন্যদের রাখা হলে সেসব প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধনের আবেদন করেছে, তাদের লাইসেন্স দেওয়ার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির আগে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না।
ফরিদপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একটি দল ফরিদপুর সদর উপজেলায় দুটি, সালথা উপজেলায় তিনটি, মধুখালী ও বোয়ালমারী উপজেলায় সাতটি এবং সদরপুর উপজেলায় একটি করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়।
বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খালেদুর রহমান বলেন, “উপজেলার আলনুর চক্ষু হাসপাতাল, সেতু সার্জিক্যাল, সেবা সার্জিক্যাল ক্লিনিক অ্যান্ড জননী ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মডার্ন ল্যাবরেটরি, মীম ডায়াগনস্টিক, স্বর্ণা সার্জিক্যাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এছাড়া মোল্লা আহম্মদ হোসেন মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কোহিনুর ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল, দি ইস্টার্ন সার্জিক্যাল ক্লিনিক ও আল-আমিন সার্জিক্যাল ক্লিনিককে এক মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধনসহ যাবতীয় কাগজপত্র সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে। জমা দিতে না পারলে বন্ধ করে দেওয়া হবে প্রতিষ্ঠানগুলো।”
সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা সদরসহ পাঁচ উপজেলায় অভিযান চালানো হয়। অবৈধভাবে পরিচালনা করায় ২০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য উপজেলায় এ অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
টাঙ্গাইলে প্রথম দিনের অভিযানে শহরে চারটি, মধুপুর উপজেলায় দুইটি, ভূঞাপুরে দুইটি, মির্জাপুরে দুইটি, ঘাটাইলে একটি ও গোপালপুরে ছয়টি অনিবন্ধিত ক্লিনিক সিলগালা করা হয়।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রানু আরা খাতুন ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, বৈধ কাগজ পত্র না থাকায় শহরের স্বদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পদ্মা ক্লিনিক, আমানত ক্লিনিক এন্ড হসপিটালকে সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়াও কমফোর্ট হসপিটালের মালিককে ৩০ হাজার টাকা, দ্য সিটি হাসপাতালের মালিককে ২০ হাজার টাকা ও ডিজিল্যাবকে ৩০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও রোগী থাকার কারণে ডিজি ল্যাবকে রবিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তারপর সেটিও সিলগালা করা হবে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “বৈধ কাগজপত্র না থাকায় প্রথমদিনের অভিযানে টাঙ্গাইল বিভিন্ন উপজেলায় ১৭টি ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়াও আরও ৩ জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
নাটোর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে সেন্ট্রাল ল্যাব ডায়াগনস্টিক, পদ্মা ক্লিনিক, ফাইম ডায়াগনস্টিক, বরাত ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিক, হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক, তামান্না ডায়াগনস্টিক ও মদিনা চক্ষু হাসপাতাল সিলগালা করা হয়।
এদিকে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী কুমারখালি উপজেলার পাঁচটি অবৈধ প্রাইভেট ক্লিনিক বন্ধ ও অন্যটিকে সতর্ক করা হয়েছে। বন্ধ হওয়া ক্লিনিকগুলো হলো, প্রতীক আধুনিক ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রদীপ ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিশ্ব ডেন্টাল কেয়ার, শিমুল ডেন্টাল কেয়ার এবং কুমারখালি ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন।
এছাড়া হাইমচর উপজেলায় তিনটি এবং চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় আরেকটি অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: বেলায়েত হোসেন ও ডা: গোলাম মাওলা জানান।
ভোলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলী সুজা ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে আইনি কাগজপত্র ও লাইসেন্স দিতে না পারায় আব্দুল খালেক মেমোরিয়াল হাসপাতাল সিলগালা করে দেন।