ঢাকায় এক অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শকের (অতিরিক্ত ডিআইজি) বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার হওয়া গৃহকর্মী মৌসুমীর (১৪) গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের বাইতাইলে চলছে শোকের মাতম। খবর শোনার পরই তার মা ফরিদা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। দফায় দফায় তিনি মুর্ছা যাচ্ছেন। স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
বুধবার (১ জুন) বিকেলে ঢাকার রমনা এলাকার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শকের বাসা থেকে গৃহকর্মী মৌসুমীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতে মৌসুমীর লাশ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়।রাতেই দাফন করা হবে বলে জানান তার বোন জামাই আল আমিন ইসলাম।
স্বজন ও তার মায়ের অভিযোগ মৌসুমীকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় সুষ্ঠ বিচার ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেন তারা।
ফরিদা বেগম জানান, মৌসুমীর বাবা মুক্তার আলী কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। ৭ বছর আগে তিনি মারা গেলে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তিন বছর আগে মৌসুমীকে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় কাজে দেন তিনি। তারপর থেকে তাদের সঙ্গে মৌসুমীকে খুব বেশি যোগাযোগ করতে দেওয়া হতো। তাকে বাড়িতেও আসতে দেওয়া হতো না। গত ঈদে মৌসুমীকে বাড়িতে আসতে না দেওয়ায় তাকে দেখতে ঢাকায় যান ফরিদা।
তিনি বলেন, “ঢাকায় যাওয়ার পর তারা আমাকে মৌসুমীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। পরে বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে চাইলে পাঁচ মিনিটের জন্য তাকে দেখা করার অনুমতি দেয়। দেখা করার সময় মৌসুমী নির্যাতনের কথা বলতে চাইলে তাকে ইশারা দেয় পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী। পরে মৌসুমী আর কিছু বলেনি।”
ফরিদা বেগম আরও বলেন, “স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি খুব অভাবে ছিলাম। টাকার অভাবে মৌসুমীকে পড়াশোনাও করাতে পারিনি। একটু সুখের আশায় তাকে পুলিশের বাসায় কাজে দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর আর সে বাড়িতে আসেনি। মৌসুমীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ছেলেকেও কোনো এক জায়গায় পাঠিয়েছে ওই পুলিশ অফিসার। আমার ছেলেকে এনে দেন। তা না হলে আমার ছেলেকেও মেরে ফেলাবে ওরা “
স্থানীয় চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হীরা বলেন, “বিষয়টি রহস্যজনক। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
এ ব্যাপারে ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলেন, “মৌসুমীর লাশ রাতে তার গ্রামের বাড়িতে এসেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে।”