আগামী ২৫ জুন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে।
২০১৪ সালে দেশের বৃহত্তম অবকাঠামো ৬.১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর পর থেকেই ফরিদপুরবাসীর মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে
ফরিদপুর এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য ২০টি জেলা ডাবল ডেকার এই সেতুটি উদ্বোধনের পর তাদের জীবনযাত্রায় একটি বিশাল পরিবর্তনের আশা করা হচ্ছে। নিচের ডেক বরাবর রেলওয়ে ট্র্যাক স্থাপন করা হচ্ছে এবং উপরের ডেক যানবাহনের জন্য নির্মিত হয়েছে। সেতুটি ছয় লেনের মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেতুটি চালু হলেও ট্রেন চলাচল শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে।
ইতোমধ্যে ফরিদপুর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে কারণ শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীরা কারখানা স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে জমি কিনতে শুরু করেছেন, যা জেলার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে অনেকটাই উন্নতি করবে।
ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফসিসিআই) সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “পদ্মা সেতু ফরিদপুরের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেবে। পদ্মা সেতু চালু হলে ফরিদপুর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাকি জেলাগুলোর কাছে উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর জেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এছাড়া সেতুটি চালু হলে বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলা নিয়ে পদ্মা বিভাগ যেকোনো সময় ঘোষণা হতে পারে।”
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, “পদ্মা সেতু নির্মাণে নিয়ে দেশি-বিদেশি বহু ষড়যন্ত্র ছিল, তারপরেও বঙ্গবন্ধু কন্যা তার সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে দাঁড়াননি। এই কারণেই আজ আমরা সেতুর বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছি। এ জেলা দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত, আজ আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।”
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও স্থানীয় দৈনিক নাগরিক বার্তা পত্রিকার সম্পাদক মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, “বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে ফরিদপুরের মানুষের জন্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচনের জন্য পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।”
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক নাগরিক বার্তার (স্থানীয়) সম্পাদক মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, “দেশের দক্ষিণবঙ্গকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করার লক্ষেই স্বপ্নের এই পদ্মা সেতু। আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি ঋণী। তার বঙ্গবন্ধু না থাকলে যেমন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সম্ভব হতো না, ঠিক তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপ পাওয়া কঠিন ছিল।”
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, “পদ্মা সেতু নির্মাণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই চ্যালেঞ্জ সফলভাবে অতিক্রম করেছেন।”
ফরিদপুর জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকার বলেন, “পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের পর ১.২৩% হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২.৩%।”
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে সেতুকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর-মাদারীপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় অলিম্পিক ভিলেজ, শেখ হাসিনা তাঁত পল্লী তৈরি হচ্ছে, ভাঙ্গাতে বঙ্গবন্ধু মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। এজেলার প্রতিটি জায়গা একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নরে ছোঁয়া লাগছে।”