গলায় জুতার মালা জড়িয়ে অবমাননা করার ১০দিন পরেও নিজ বাড়ি ফেরেননি নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। তিনি কোথায় আছেন জানেন না স্ত্রী। পুলিশের দাবি, তিনি নিরাপদ অবস্থানে থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
তবে, তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে পুলিশ সদস্যও শাস্তির আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) অধ্যক্ষের স্ত্রী সোনালি দাস ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “গত ১৮ জুন কলেজের ঘটনা ঘটার পর আমার স্বামীকে সেফ কাস্টডিতে নেয় পুলিশ। পরদিন ছেড়ে দেয়। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। তিনি কোথায় আছেন জানি না।”
পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় দাবি করেন, “ওই শিক্ষক আত্মীয়ের বাড়িতে নিরাপদ অবস্থান নিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।”
তিনি বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করছে। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় এজাহারভুক্ত প্রধান চার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে।”
আরও পড়ুন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: শিক্ষককে জুতার মালা পরানোর ঘটনায় গাফিলতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে
বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হিমায়েত হোসাইন ফারুক ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, লাঞ্ছনার শিকার অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের পরিবার পরিজনের খোঁজ তিনি নিয়মিত রাখছেন।
তিনি বলেন, “ঘটনার দিন আসলে পুলিশের তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারপরও এ ঘটনায় পুলিশ ও জেলা জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীরা শনাক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি হবেই।”
মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের প্রফেসর আকিদুল ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমারের সঙ্গে যে অবমাননাকর ঘটনা ঘটেছে, তাতে তিনি অপমানিত হয়েছেন। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত সকলকেই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “ঘটনার দিন কলেজ প্রাঙ্গণের পরিস্থিতি খুব বেশি অস্বাভাবিক ছিল। পুলিশ সেখানে চেষ্টা করছিল বিনা রক্তপাতে পরিস্থিতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। জান মালের কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “জেলা পুলিশের তিন সদস্যর একটি ও জেলা প্রশাসনের তিন সদস্যর আরও একটি কমিটি বিষয়টি তদন্ত করছে। প্রাথমিক তদন্তের পর শিক্ষক অবমাননাসহ বেশ কয়েকটি অপরাধের জন্য পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। তিন জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে পুলিশ বা অন্য কেউ জড়িত থাকলে তা ওই দু’টি তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
আরও পড়ুন- শিক্ষকের গলায় জুতার মালা, কারা নেড়েছিল কলকাঠি
কী ঘটেছিল
ইসলাম ধর্মের নবীকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সমালোচনায় থাকা ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার ছবি দিয়ে ফেসবুকে নড়াইলের এক কলেজছাত্র একটি পোস্ট দেয়। ওই পোস্টকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। সে সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, গত ১৭ জুন পোস্টটি দেওয়ার পরদিন ওই ছাত্র কলেজে গেলে কিছু মুসলমান শিক্ষার্থী তাকে পোস্ট মুছে ফেলার জন্য বলে। এরই মধ্যে ‘‘অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের পক্ষ নিয়েছেন’’ এমন কথা রটানো হয়। এই কথাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয় এলাকায়। স্থানীয়দের একটি পক্ষ অধ্যক্ষ ও দুজন শিক্ষকের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদেরও সংঘর্ষ হয়।
আরও পড়ুন- পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা, সচেতন মহলের প্রতিবাদ
ওই সময় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ছাত্র ও স্থানীয়রা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে। ঘটনার কিছু ছবি এবং ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেসব ছবি ও ভিডিওতে ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতিও দেখা যায়।