একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বীরকন্যা বীরপ্রতীক তারামন বিবি আর নেই । মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।
ফুসফুস সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট ছিল তার। দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা সদরে নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুর সময় তারামন বিবি স্বামী আবদুল মজিদ, ছেলে আবু তাহের ও মেয়ে মাজেদা খাতুন সহ পরিবারের সদস্যদের রেখে গেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের ক্রান্তিলগ্নে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার রান্না করা, তাঁদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, পাকিস্তানি বাহিনীর খবর সংগ্রহ করা এবং সম্মুখযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে বীরদর্পে লড়াই করেছিলেন এই অকুতোভয় কিশোরী যোদ্ধা।
তারামন বিবির জন্ম কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাঠি ইউনিয়নের কাছারিপাড়ার শংকর মাধবপুর গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তিনি তখন কিশোরী তারামন। এই কিশোর বয়সেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন শংকর মাধবপুরে ১১ নম্বর সেক্টরে।
দুর্ধর্ষ সেই কিশোরীর অপরিমেয় সাহসিকতার জন্য তাঁকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর হাতে সেই সম্মাননা তুলে দিতে মেগে যায় দীর্ঘ ২২ বছর। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তারামন বিবিকে বীর প্রতীক দেয়া হলেও তাঁকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয় ১৯৯৫ সালে। ওই বছরই ১৯ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে তারামন বিবির হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত একটার দিকে তারামন বিবি অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজিবপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেলোয়ার হোসেন তাঁর বাড়িতে আসেন। রাত দেড়টার দিকে তিনি তারামন বিবিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
তারামন বিবির মরদেহ এখন তাঁর বাসায় রাখা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন তার অনুরাগীরা। আজ শনিবার বাদ জোহর জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।