যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে করা মামলার সাক্ষীদেরকে সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে এসেছে যখন সুমন জাহিদকে ঢাকায় মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল।
২০১০ সালে যখন সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, তখন থেকেই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও যুদ্ধাপরাধের সাক্ষীদের বারংবাদ দাবি স্বত্বেও বাংলাদেশে এই আইনটি এখনও তৈরি হয় নি।
২০১৩ সালে এই মামলার ৩ জন সাক্ষী মারা যান, অন্যদিকে একজন সাক্ষীর বাসা ও দোকানে বোমা হামলা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান এটিএম ফজলে কাবিরের গ্রামের বাড়িতেও বোমা হামলা হয় একই বছরে।
৫২ বছর বয়স্ক সুমনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয় একটি রেললাইন থেকে। পুলিশের ধারণা তিনি সম্ভবত ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
সুমনের পরিবারের সদস্যদের ধারণা, তাঁকে সম্ভবত তারাই হত্যা করেছে যারা আল-বদর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে তাঁকে হুমকি দিয়ে আসছিল।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির প্রধান শাহরিয়ার কবির বলেন, সাক্ষীদেরকে রক্ষা করতে না পারাটা দুর্ভাগ্যজনক।
ঢাকা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, “সাক্ষীদেরকে রক্ষা করাটা খুব প্রয়োজনীয়”। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধের সাক্ষীদের মৃত্যুর ঘটনাগুলো সঠিকভাবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
শুধু সাক্ষীদেরই নয়, ট্রাইব্যুনালের বিচারক এবং এই প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইরই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধ অবস্থানকারী জামায়াতী ইসলামীর বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালের পুনর্গঠনের উপরেও তিনি জোর দেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, যুদ্ধাপরাধ ও অন্যান্য মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা জরুরি।
তিনি বলেন, “আপনি যেখানেই সাক্ষ্য দিন না কেন, হয়রানি হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আইনটি প্রণয়ন করা দরকার এজন্য যে যুদ্ধাপরাধের অভিযুক্তরা খুবই শক্তিশালী”।
মানবাধিকার কমিশনের প্রধান আরও বলেন, মানবাধিকারের জন্য কাজ করা মানুষদের জন্যও আইনটি প্রণয়ন করা দরকার এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
আইন মন্ত্রনালয় ২০১১ সালে ‘সাক্ষী সুরক্ষা আইন ২০১১’ এর খসড়া তৈরি করে কিন্তু তা এখন পর্যন্তও আলোর মুখ দেখে নি।
আইন মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যুদ্ধাপরাধাদের সাক্ষীদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের- এবং তিনি জানান যে সাক্ষীরা যখনই নিরাপত্তা চায় তখনই তাদেরকে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “যে কোনো মূল্যে আমাদের তাদেরকে সুরক্ষা দিতে হবে। আমরা সাক্ষীদের সুরক্ষার ওপর অনেক আগে থেকেই জোর দিয়ে আসছি এবং এ বিষয়ক একটি আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়াতেও রয়েছি যেহেতু সাক্ষীদেরকে হুমকি প্রদানের মত ঘটনা ঘটছে।”
তবে ঠিক কবে নাগাদ আইনটি প্রণয়ন করা হবে সে বিষয়ে মন্ত্রী কোনো উত্তর দিতে পারেন নি।