Monday, March 17, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

‘ইঁদুর বন্যায়’ দিশেহারা বান্দরবানের জুম চাষিরা

চলতি বছরের খাদ্যের যোগান কিভাবে হবে সেই চিন্তায় দিন পার করছেন জুমিয়ারা

আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৭:১০ পিএম

একদিকে অনাবৃষ্টি, অন্যদিকে ইঁদুরের আক্রমণে বান্দরবানে পাহাড়ের জুম ক্ষেতে আশানুরূপ ফসল হচ্ছে না। ফলে বছরের জন্য পরিবারের খাদ্যের যোগান কীভাবে হবে, সেই আশংকায় দুশ্চিন্তার শেষ নেই জুম চাষিদের। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় বান্দরবানের রুমা, লামা, থানচিসহ বিভিন্ন উপজেলায় জুম ফলন ভালো হয়নি। অন্যদিকে রুমা উপজেলার পাইন্দু ও সদর ইউনিয়নের জুম ক্ষেতে ধানের শীষ নেই, ইঁদুর সব খেয়ে সাবাড় করে ফেলেছে।

রুমা ও থানচি উপজেলা সীমান্তরেখার রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাংদিয়া পাড়ার বাসিন্দা বীর বাহাদুর ও অরসেন ত্রিপুরা। তারা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “এবার ঈশ্বর সহায় না হলে পাহাড়ের মানুষের হাহাকার দেখা যাবে, খাদ্য সংকট বা অভাব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।”

জানা গেছে, এ বছর বাঁশঝাড়ে ফুল ও ফল আসার কারণে ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। জুম ক্ষেতে বিচরণ করা একেকটি ইঁদুরের ওজন প্রায় ১ কেজি। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইঁদুরের উপদ্রব বেড়েছে। ইঁদুর ধান, যব ধান, ভুট্টা, তিলসহ অন্যান্য ফসল খেয়ে ফেলায় খাদ্য সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

রুমার পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার অংসা প্রু মারমা ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “অনাবৃষ্টির পর ইঁদুর বন্যার ফলে পাহাড়ে এবার খাদ্য সংকট দেখা দেবে।”

পাহাড়ের জমিতে ধান, তিল, ভুট্টা, মরিচ, শাক-সবজি, বিভিন্ন ধরনের ফল, কুমড়া ইত্যাদি ফসলের চাষ হয়। পাহাড়ি জনগণ জুম চাষের মাধ্যমে সারা বছরের ধান সংগ্রহ করে রাখেন। কোনো কারণে ভালো ফলন না হলে, ইঁদুরের আক্রমণ ঘটলে বা বন্যা দেখা দিলে বছরের খাদ্য মজুত করা সম্ভব হয় না।

রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মুয়ালপি মারমা পাড়ার জুম চাষি আবু মং মারমা জানান, অনাবৃষ্টির কারণে ধান ভালো হয়নি, তার মধ্যে হাজার হাজার ইঁদুর পাকা ধানসহ ফসল নষ্ট করে ফেলেছে। ইঁদুরের আক্রমণে এ বছর খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।

স্থানীয়রা জানান, ৯৫% মানুষ জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। ধানের ফসল ভালো না হলে খাদ্য সংকটে পড়বে ৭০ থেকে ৮০% পরিবার। ইতোপূর্বে ২০১২ সালে বান্দরবানের থানচি, রুমা, রাঙামাটির সাজেক, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলায় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালে বান্দরবানের থানচির দুর্গম রেমাক্রি, তিন্দু, ছোট মদক, বড় মদক ও সাঙ্গু রিজার্ভ ফরেস্ট এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এসব এলাকায় ত্রিপুরা, ম্রো ও মারমা সম্প্রদায়ের বাস।

জেলার রুমা উপজেলার মুয়ালপি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাওন চৌধুরী ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, রুমার প্রাংসাপাড়া, সানাপ্রু পাড়া, ক্যাতুই পাড়া, বাচরাং পাড়া, হ্যাপিহিল পাড়া, আর্তা পাড়া, মুনন্নম পাড়ার ১৮০টি পরিবার ইঁদুর বন্যার ফলে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আনুমানিক ৭০ হেক্টর জুম ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ হয়েছে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

সর্বশেষ ২০১২ সালে ইঁদুর বন্যা ও বন্য শুকরের আক্রমণের ফলে জুমে প্রত্যাশিত ফলন আসেনি। ফলে বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম রেমাক্রি, তিন্দু ও সদর ইউনিয়নের আদিবাসী জুমিয়া পরিবারগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়।

ইঁদুর বন্যায় ক্ষতির কথা স্বীকার করে রুমা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমি ৬ সেপ্টেম্বর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। তাদেরকে ইঁদুর নিধনের জন্য পরামর্শ দিয়েছি। ব্লক সুপারভাইজাররা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করছেন।”

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ৮,৭৪৭ হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪,২৯৭ মেট্রিকটন।

এই ব্যাপারে বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “অনাবৃষ্টি ও ইঁদুরের কারণে এবার জুমচাষে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জুম চাষে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেই বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন, আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি। সব তথ্য হাতে এলে পরিষদ থেকে কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হবে।”

   

About

Popular Links

x