বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে খুলনায় ৫ ঘণ্টায় ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সবশেষ চার বছর আগে এমন বৃষ্টিপাত দেখেছিল খুলনা। এ বৃষ্টিতে নোংরা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে মহানগরীর অধিকাংশ সড়ক। অধিকাংশ বাড়ির সামনে পানি উঠেছে। ঘরের ভেতরে ঢুকে গেছে নর্দমার নোংরা পানি।
বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত মধ্যরাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
অধিকাংশ রাস্তা তলিয়ে থাকায় চলতে পারছে না রিক্সা-ইজিবাইক।
এদিকে, বৃহস্পতিবার থেকে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছে নগরীর পরীক্ষার্থীরা। যথাসময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে।
বয়রা মডেল হাই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী নোমানের ভাষ্য, তার এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র বয়রার হাজী ফয়েজ উদ্দিন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। সকালে হাঁটু পানি ভেঙে কেন্দ্রে ঢুকতে হয়েছে। বড় ভাইয়ের সঙ্গে মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে রাস্তার কাদাপানি ছিটে কাপড় নোংরা হয়েছে।
নোমানের বড় ভাই নাসিব আহসান রুমি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “১১টায় পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়। কিন্তু রাস্তা, বাসা-বাড়ি পানিতে সয়লাব। এ কারণে ১০টায় ভাইকে নিয়ে নুরনগরের বাসা থেকে বের হই। জিপিও পাড় হয়েই নোংরা পানি। মোটরসাইকেল চালিয়ে কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে দুজনেরই জামাকাপড় নোংরা হয়ে যায়।”

তিনি বলেন, “স্কুলের সামনে গর্ত ছিল। পানির কারণে বুঝতে না পারায় গর্তে পড়ে দুটি ইজিবাইক উল্টে শিক্ষার্থীরা কাদাপানিতে ভিজে যায়। ওই অবস্থায়ই তাদের পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। আমার ভাইও ভেজা প্যান্ট পরে খালি পায়ে পরীক্ষা দিচ্ছে।”
টুটপাড়া নিবাসী মনিরা রত্না বলেন, “রাত সাড়ে ৩টার দিকে টের পেলাম ঘরে পানি ঢুকেছে। ১৯৮৭ সালে বাড়ি তৈরির পর প্রথমবার এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলাম।”
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ বলেন, “চার বছর পর খুলনায় কম সময়ে এত বেশি বৃষ্টি হল। রাত ১টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় ১৪৬ মিলিমিটার। এই বৃষ্টিপাতের কারণ নিম্নচাপ।”
তিনি আরও বলেন, “নিম্নচাপ কেটে গেলেও প্রভাব এখনো আছে। ফলে খুলনার আকাশে মেঘ দেখা যাচ্ছে। এতে ২-১ বার হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।”
এদিকে, নগরীর সচেতন বাসিন্দারা বলছেন, শহরের খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। আর ড্রেন নির্মাণের কাজও চলছে ধীরগতিতে। ফলে বৃষ্টি হলেই নগরবাসীকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
জানা যায়, খুলনার নিরালা, মুজগুন্নী, বয়রা ও প্রান্তিকাসহ অধিকাংশ আবাসিকের বাড়িতে পানি ঢুকেছে। নিচতলা নিমজ্জিত। সব রাস্তায় পানি। পানি ঢুকেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। দীর্ঘদিন ধরে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে নগরীর অনেক জায়গায়।
এছাড়া, নগরীর অধিকাংশ খাল দখল করে বালি ভরাটও এ জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ। পানির কারণে কোনটি রাস্তা আর কোনটি জলাশয় চেনার উপায় নেই।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “বৃষ্টির পানিতে খুলনার অধিকাংশ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।”
খুলনায় এবার ৫৮টি কেন্দ্রে অংশ নিচ্ছে ২৬ হাজার ৮ জন পরীক্ষার্থী। এ বছর খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকার ৩৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খুলনার কেন্দ্রগুলো হচ্ছে জিলা স্কুল, দৌলতপুর মুহসিন, পাবলিক কলেজ, বঙ্গবাসী, নৌ-বাহিনী, গভ. ল্যাবরেটরী, খুলনা সরকারী বালিকা, বয়রাস্থ সরকারী মডেল, হাজী ফয়েজউদ্দিন, সরকারী করোনেশন, সরকারী মডেল, ফাতেমা, বিকে ইউনিয়ন, খুলনা কলেজিয়েট, রোটারী মাধ্যমিক, পল্লী মঙ্গল, ইকবালনগর বালিকা, ইসলামাবাদ কলেজিয়েট, খালিশপুর মাধ্যমিক, আফিলুদ্দিন, দৌলতপুর মুহসিন বালিকা, আরআরএফ, খানবাড়ি মাধ্যমিক, চালনা বালিকা বিদ্যালয়, বাজুয়া ইউনিয়ন মাধ্যমিক, পাইকগাছা সরকারী, কপিলমুনি সহচরী বিদ্যামন্দির, আর কে বি কে, চাঁদখালী মাধ্যমিক, গড়ইখালী মাধ্যমিক, কপিলমুনি মাধ্যমিক, বটিয়াঘাটা হেডকোয়াটার, খারাবাদ বাইনতলা, চক্রাখালী, ডুমুরিয়া এনজিসি ও এনসিকে, শাহাপুর মাধ্যমিক, দিব্যা পল্লী মাধ্যমিক, সাহস নোয়াকাটি, ফুলতলা রি-ইউনিয়ন, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক, জামিরা মাধ্যমিক, শিরোমনি মাধ্যমিক, কাজদিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেলফুলিয়া ইসলামিয়া, শিয়ালী মাধ্যমিক, দিঘলিয়া এম এ মজিদ, সেনহাটি সরকারী, হাজী ছায়েমউদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও গাজীরহাট হাজী নৈমুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কয়রা মদিনাবাদ, আমাদী জায়গীরমহল, ভিকেএসএ গিলাবাড়ী, সুন্দরবন মাধ্যমিক, ইখুড়িকাটেঙ্গা, ডুমুরিয়া সরকারী বালিকা, কয়রা চান্নিচক কলেজিয়েট ও শলুয়া পূর্ণচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র।