খুলনার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া নারী রহিমা খাতুনকে (৫৫) ২৯ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
তাকে উদ্ধারের পর পুলিশ জানায়, তিনি গত সাত থেকে ১০ দিন ধরে নিজের বাড়ির পুরানো এক ভাড়াটিয়ার বাসায় স্বেচ্ছায় লুকিয়ে ছিলেন।
গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রাহিমা খাতুন । দীর্ঘসময় পার হলেও তিনি বাসায় ফিরে না আসায় চিন্তিত সন্তানেরা মায়ের খোঁজে সেখানে গিয়ে মায়ের ব্যবহৃত স্যান্ডেল, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সকল স্থানে সন্ধান নেওয়ার পর মাকে পান না। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
রহিমা খাতুনকে উদ্ধারের পর খুলনার দৌলতপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, রহিমাকে খুঁজে পাওয়ার পর থেকেই তিনি চুপ রযেছেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ধারণা করা হচ্ছে-জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধের কারণে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “২৮ বছর আগে খুলনার সোনালী জুট মিলে চাকরি করতেন কুদ্দুস বিশ্বাস। তখন তিনি পরিবার নিয়ে রহিমার বাসায় ভাড়া থাকতেন। ওই সময় রহিমার পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে কুদ্দুসের পরিবারের। কয়েক বছর আগে কুদ্দুস পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। তাদের মধ্যে মাঝেমধ্যে যোগাযোগ হতো। সম্প্রতি পারিবারিক নানা বিষয় নিয়ে রহিমার সঙ্গে স্বামীর কলহ চলছিল। এ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আত্মগোপন করেন রহিমা। নিখোঁজের পর কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করেছেন। এজন্য তার লোকেশন শনাক্ত করতে বেগ পেতে হয়েছে আমাদের। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে যান। এরপর থেকে সেখানে ছিলেন তিনি।”
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “নিখোঁজের পর থেকেই তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির ভিত্তিতে আমরা তার সন্ধান বের করার চেষ্টা করছিলাম। এরই মধ্যে ময়মনসিংহের ফুলপুরে অজ্ঞাত এক নারীর লাশকে নিজের মায়ের দাবি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে দেয় তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। তবে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছিলাম। সেইসঙ্গে নিখোঁজের আগে রহিমার সঙ্গে যাদের মোবাইলে যোগাযোগ হয়েছিল, তাদের মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিং করে লোকেশন শনাক্তের চেষ্টা করেছি। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় গোয়েন্দা সংস্থা থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি, কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে অবস্থান করছেন রহিমা। এরই ভিত্তিতে ওই বাড়িতে গিয়ে আমরা তাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। বিস্তারিত সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেবো আমরা। এখন খুলনা থানা পুলিশের হেফাজতে আছেন রহিমা।”
রহিমাকে শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদ করে আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
এদিকে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, পুলিশ যখন কুদ্দুসের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন রহিমা খাতুন সেখানে ক্দ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের বউয়ের সঙ্গে গল্প, হাসি-আড্ডায় মেতে ছিলেন। কিন্তু পুলিশ দেখার পর থেকেই তিনি নির্বাক হয়ে যান।
তিনি বলেন, “রহিমা খাতুনকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল আমাদের, আমরা সফলভাবে তা করতে পেরেছি। তিনি তার ফোন বন্ধ রাখায় অনুসন্ধান অভিযানে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা সময় বেশি রেগেছে।”
পুলিশ দ্রুতই ঘটনার পুরো রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা রহিমাকে আপাতত কেএমপির ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখব। আমরা প্রথমে তার সুস্থতার প্রতি জোর দিচ্ছি। তাকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করব। এরপর আমরা তাকে পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করব।”
এ প্রসঙ্গে রহিমার ছেলে সাদি বলেন, “আমার মাকে যেহেতু জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, তিনি নিজেই ঘটনার ব্যাখ্যা দেবেন।”
তিনি আরও বলেন, “যদি আমার পরিবারের কেউ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।”
এর আগে, গত ২২ আগস্ট ময়মানসিংহে অজ্ঞাত পরিচয়ে দাফন করা এক নারীকে নিজের মা বলে ধরে নেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান।
সে সময়ে মরিয়ম মান্নান এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, “আমি এইমাত্র আমার মায়ের লাশ পেয়েছি।”
তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), খুলনার দৌলতপুর থানা ও ময়মনসিংহ থানা পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি।
মরিয়ম তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান, পোশাক এবং ছবি যাচাই করে মায়ের লাশ শনাক্ত করেছেন তিনি।
তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, দৌলতপুরের মহেশ্বেরপাশা এলাকায় কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে তাদের জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ ছিল।
মহেশ্বেরপাশায় নিজের বাড়িতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ায় তারা বণিকপাড়ায় একটি বাসা ভাড়া নেন বলেও জানান মরিয়ম মান্নান।
মরিয়মের অভিযোগ, মামলা করার পর তাদের পরিবার হামলার শিকার হয়।
তার মাকে জীবনের হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং গুণ্ডারা তার ছোট মেয়ে মরিয়মের বোনকে ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয় বলেও অভিয্গে করেন মরিয়ম।
এ ঘটনায় তার মা বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় আরেকটি মামলা করেন।