বগুড়ায় শারদীয় দুর্গোৎসবে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমারী পূজা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে কুমারী পূজা দেখতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের লোকজনও মন্দিরে ভিড় করেন।
সোমবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে শাজাহানপুর উপজেলার গণ্ডগ্রামের শ্রী রামকৃষ্ণ আশ্রমে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
হিন্দু শাস্ত্রমতে, কুমারী পূজার উদ্ভব হয় কোলাসুরকে বধের মধ্য দিয়ে। কোলাসুর এক সময় স্বর্গমর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেবী কুমারী রূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকে পৃথিবীতে কুমারী পূজার প্রচলন ঘটে।
বগুড়ায় কুমারী পূজার জন্য কুমারী মায়ের আসনে বসানো হয় আট বছর বয়সী শুভশ্রী রাণী দাসকে। তার বয়স ৮ বছর হওয়ায় কুষ্ঠিকা নামে পূজিত হন। পূজা কার্যক্রম পরিচালনা করেন আশ্রমের পুরোহিত বাসুদেব ব্যানার্জী।
তিনি বলেন, “কুমারী আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। দুর্গার আরেক নাম কুমারী। মূলত; নারীকে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতেই কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। মাটির প্রতিমায় যে দেবীর পূজা করা হয়, তারই বাস্তব কুমারী পূজা।”
কুমারী পূজার আসনে বসানো শুভশ্রীর রাণী দাসের মা সরস্বতী দাস বলেন, “এতে আমরা সম্মানিত। মেয়েরা বিভিন্ন সময় যে বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকে মাতৃ বন্দনার মধ্য দিয়ে যেন সে অসুর প্রবৃত্তির বিনাশ ঘটে।”
পূজা দেখতে এসেছেন পূর্ণাথী সঞ্চিতা বসাক, বৃদ্ধ গোবিন্দ সাহা, অরবিন্দ কুমার, মুক্তি রায় প্রমুখ। তারা ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, বাস্তবে কখনও তারা কুমারী পূজা দেখেননি। ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আয়োজিত কুমারী পূজা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছেন। তাই তারা পরিবারের সবাইকে নিয়ে পূজা দেখতে এসেছে। তারা এ পূজার মাধ্যমে নারী শক্তির জয় কামনা করেন।
কুমারী পূজার কথা শুনে অন্য ধর্মের নারী-পুরুষও আশ্রম চত্বরে ভিড় করেন।
বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু রায় ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় ৬৭৯টি মণ্ডপে দূর্গোৎসব হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫০টি মণ্ডপকে ঝুঁকিপূর্ণ, ২৪০টি কম ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৮৯টিকে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে দূর্গোৎসব সম্পন্ন করতে প্রশাসন ও মন্দির কমিটি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
নির্মলেন্দু রায় বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রত্যাশা করেন, দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়। অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির।”