দেশের যোগাযোগ খাতে মাইলফলক স্থাপন করেছে পদ্মা সেতু। তবে বহুল প্রত্যাশিত সেতুটি উদ্বোধন হলেও এর সুফল পাচ্ছে না মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীরা। ঝুঁকিপূর্ণ চলাচল এড়াতে উদ্বোধনের দু'দিন পরই পদ্মা সেতুতে মোটর সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। সাড়ে তিন মাস পার হলেও ভোগান্তির সুরাহা মিলছে না পদ্মার ওপারে থাকা নিয়মিত মোটরসাইকেলে যাতায়াতকারীদের ।
এদিকে পদ্মাসেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের নিষেধাজ্ঞা কবে তুলে নেওয়া হবে সে ব্যাপারেও কিছু বলতে পারছে না বাংলাদেশ সেতু বিভাগ কর্তৃপক্ষও।
বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে বাংলাদেশ সেতু বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মঞ্জুর হোসেন ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল তো চলবে। কিন্তু কবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ এ ব্যাপারে আমাদের কাছে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলে অবশ্যই জানবেন।”
এর আগে, গত ২৮ জুন পদ্মা সেতুতে মোটর সাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সাময়িক বলে জানান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ।
কিন্তু সাড়ে ৩ মাস পার হলেও পদ্মাসেতুতে মোটরসাইকেলের চলাচলের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এদিকে পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে মাওয়া-কাঠালবাড়ি-মাঝিকান্দি নৌ-পথে ফেরি ও লঞ্চ পারাপার সার্ভিসও। ফলে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ। সেই সঙ্গে বেড়েছে যাতায়াত ব্যয়ও ।
জানা যায়, যাত্রীদের হয়রানি কমাতে মাঝিকান্দি-মাওয়া নৌ-পথে এক মাস ধরে লঞ্চ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। তারাও মোটরসাইকেল প্রতি ৪০০ টাকা নিয়ে পারাপার করেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা পর পর লঞ্চ ছাড়া হয় ।
মোটরসাইকেল চালক হানিফ বলেন, “লঞ্চে মোটরসাইকেল পারাপার সময় সাপেক্ষ এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু উপায় নেই। পিকআপে ৮০০-১২০০ টাকা করে যেতে হয়। এর থেকে লঞ্চই ভালো।”
রাইড শেয়ারিং পেশায় কর্মরত জামাল হোসেন বলেন, “পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকা ব্যয়বহুল। তাই করোনা মহামারির সময় বাড়িতে চলে আসি। রাইড শেয়ারিং গ্রামের দিকে এত জনপ্রিয় না। তাই আগে ফেরিতে করে ঢাকায় যাতায়াত করে কাজটা করতাম। পরে পদ্মাসেতু উদ্বোধন হওয়ার পর ভেবেছিলাম ভাগ্য মনে হয় খুললো। কিন্তু অভাগাদের আর কপাল!”
লঞ্চঘাটের লস্কর মামুন জানান, প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টি মোটরসাইকেল পার করতে পারেন তারা। কিন্তু এটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ বলেও দাবি করেন এ লস্কর।
অন্যদিকে, সরেজমিনে সেতুর মাওয়া প্রান্ত থেকে আধা কিলোমিটার দূরত্বে পিকাপভ্যানে মোটরসাইকেল পারাপার নিয়ে দরকষাকষি চলতে দেখা যায়। একপর্যায়ে পিকআপ ভ্যান চালক মোটরসাইকেল প্রতি ১,১০০ টাকায় পারাপারে রাজি হয়।
এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাজ্জাদ নামে এক মোটরসাইকেল চালক এ প্রতিবেদককে বলেন, “সুযোগ পেলেই অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে নিচ্ছে। অথচ মোটরসাইকেলে পদ্মাসেতু পার হলে ৪০০ টাকা খরচ হয়। এসময়ে এত টাকা যাতায়াতে খরচ করাটা কঠিন। তাই সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়ে আমাদের হয়রানি মুক্ত করবেন। নয়তো পুনরায় ফেরি সার্ভিস চালু করে দেওয়া হোক।”