রাজশাহী জেলা পরিষদের নির্বাচনে দুই নম্বর সংরক্ষিত নারী আসনে (বাগমারা, দুর্গাপুর ও মোহনপুর) দুই সতীন ফিরোজা বেগম ও নাছিমা বেগম হেরেছেন। তাদের আসনে জয়ী হয়েছেন সুলতানা পারভীন রিনা। তিনি লাটিম প্রতীকে পেয়েছেন ১৩৫ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী পারভীন বিবি ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৮৫ ভোট। ফিরোজা বেগম পেয়েছেন ৩৩ ভোট এবং নাছিমা বেগম পেয়েছেন ৩৭টি।
এর মধ্যে ফিরোজা বেগম হরিণ প্রতীকে বাগমারায় ২৪, দুর্গাপুরে দুই, মোহনপুরে সাত ভোট পেয়েছেন। তার সতীন নাছিমা বেগম বই প্রতীকে বাগমারায় ৩২, দুর্গাপুরে দুই ও মোহনপুরে তিন ভোট পেয়েছেন। এ আসনে সাতজন নারী প্রার্থী ছিলেন।
জানা যায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত (বাগমারা, দুর্গাপুর ও মোহনপুর ) আসনে সংক্ষরিত নারী সদস্য পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাগমারার সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের ছোট ভাই মাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল হক ল্যাদার দুই স্ত্রী। স্ত্রীদের মধ্যে ফিরোজা বেগম হরিণ প্রতীক এবং নাছিমা বেগম বই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
তবে ভোটের মাঠে ছোট স্ত্রী ফিরোজাকে সমর্থন দেন রেজাউল হক। স্বামীর নিষেধ সত্ত্বেও প্রার্থী হওয়ায় বড় স্ত্রী নাছিমা বেগমকে তালাক দেন রেজাউল হক। তবুও ভোটের ময়দানে লড়াই চালিয়ে যান নাছিমা। ভোট যুদ্ধে দুই সতিনেরই ভরাডুবি হয়েছে।
রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের মধ্যে বিজয়ী হলেন যারা-
সোমবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, শেষ হয় দুপুর ২টায়। মোট ১,১৮৫ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ১,১৭৫ জন ভোটার। এ নির্বাচনে ৯টি উপজেলায় সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যদের মধ্যে বিজয়ী হলেন যারা।
বাগমারা: বাগমারায় সাধারণ সদস্য পদে আবু জাফর মাস্টারকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বাগমারা উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ২৩৭ জন। নির্বাচনে শতভাগ ভোট পড়েছে। এতে সাধারণ সদস্য পদে আবু জাফর মাস্টার টিউবওয়েল প্রতীকে ৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আবু জাফর মাস্টার গত নির্বাচনেও সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতি প্রতীকে বাবুল হোসেন পেয়েছেন ৮০ ভোট। এছাড়া তালা প্রতীকে মাহমুদুর রহমান রেজা পেয়েছেন ৪৫ ভোট, বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে আব্দুর রশিদ পেয়েছেন ২৪ ভোট, অটোরিকশা প্রতীকে শিরিনা পারভীন পেয়েছেন তিন ভোট। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে একটি ভোট বাতিল হয়েছে।
পবা: পবায় মোট ভোটার ১৭৪ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ১৭০ জন। পবায় সাধারণ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তফিকুল ইসলাম। তিনি ৮৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
মোহনপুর: কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আগেই বিজয়ী হয়েছেন দীলিপ কুমার তপন।
বাঘা: বাঘায় সাধারণ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির নেতা মহিদুল ইসলাম। তিনি ৭২টি ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান মতি পেয়েছেন ৪৩ ভোট। বাঘায় ১২০ জন ভোটার।
দুর্গাপুর: দুর্গাপুরে সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু। ৩৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তিনি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাহাদাৎ হোসেন পেয়েছেন ২৫ ভোট।
তানোর: তানোরে সাধারণ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তানোর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন। তিনি ৫৬টি ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গোলাম মোস্তফা ২৪টি ভোট পেয়েছেন। গোলাম মোস্তফা গতবারের জেলা পরিষদের সাধারণ সদস্য ছিলেন।
গোদাগাড়ী: গোদাগাড়ীতে সাধারণ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুর রশিদ। তিনি ৮৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বদিউজ্জামান ভোট পেয়েছেন ৫৬ ভোট।
চারঘাট: চারঘাটে সাধারণ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জনাব আলী। জনাব আলী ৪৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শফিউল আলম রতন পেয়েছেন ৩০ ভোট।
পুঠিয়া: পুঠিয়ায় সাধারণ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আসাদুজ্জামান মাসুদ। টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৪৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শরিফুল ইসলাম টিপু (তালা) প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ৪৫ এবং মোহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম (বৈদ্যুতিক পাখা) প্রতীক নিয়ে দুই ভোট পেয়েছেন।
সংরক্ষিত নারী সদস্য (মোহনপুর-বাগমারা-দুর্গাপুর) নির্বাচিত হয়েছেন সুলতানা পারভীন রিনা। তিনি ভোট পেয়েছেন ১৩৫টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পারভীন বিবি পেয়েছেন ৮৫ ভোট।
সংরক্ষিত নারী সদস্য (চারঘাট-পুঠিয়া-বাঘা) নির্বাচিত হয়েছেন চারঘাট মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী সাজেদা।
সংরক্ষিত নারী সদস্য (গোদাগাড়ী-তানোর-মোহনপুর) নির্বাচিত হয়েছেন শিউলি রানী সাহা। তিনি ৬৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কৃষ্ণা দেবি।
জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। মীর ইকবাল কাপ-পিরিচ প্রতীকে ৫৯৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান আকতার মোটরসাইকেল প্রতীকে পেয়েছেন ৫৬৬ ভোট। আখতারুজ্জামান আওয়ামী লীগের “বিদ্রোহী প্রার্থী” ছিলেন।
জেলা পরিষদের নয়টি সাধারণ ওয়ার্ডের জন্য ৩১ জন এবং তিনটি সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।