গত কয়েকদিনে দেশে ঊর্ধ্বমুখী ডেঙ্গু আক্রান্ত্রের হার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী কক্সবাজারে। জেলাটিতে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বর্তমানে কক্সবাজারে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের পাশাপাশি জেলাটিতে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। জেলায় এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে রোহিঙ্গা ২৭ জন।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা গেছে ২২ জন, ক্যাম্পের হাসপাতালে ১০ ও বসতবাড়িতে একজনের মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ছড়াছড়ি।জ্বর, মাথা ব্যথাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা।
এ বছর কক্সবাজারে ডেঙ্গুর রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৩৩০ জন। যেখানে রোহিঙ্গা আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮৬ জন।
ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কক্সবাজার শহরের বৈদ্যঘোনা, পাহাড়তলী, কুতুবদিয়া পাড়া, টেকপাড়া, সমিতিপাড়া, নুনিয়াছড়া, টেকনাফ উপজেলার কিছু এলাকাকে। এছাড়াও উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প-৪, ক্যাম্প-৩, ক্যাম্প ১/ইস্ট, ক্যাম্প-২৪,২৬ ও ১১ কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকায় মূলত ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে অতিরিক্ত প্লাস্টিক ব্যবহারকে।
শহরের সমিতিপাড়ার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক ফরিদুল আলম বলেন, “বিভিন্ন স্থানের জলাশয় ও নালা-নর্দমায় জমে থাকা পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে এডিস মশার লার্ভা থাকলেও সেগুলো ধ্বংসের উদ্যোগ নেই পৌরসভার। যে কারণে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে।”
সমিতিপাড়ার মৎস্য ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুই দিন ধরে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। তার দাবি, প্রথমে জ্বর আসে তার। স্বাভাবিক মনে হওয়ায় গুরুত্ব দেননি। জ্বর বাড়ার পর চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন। ধরা পড়ে ডেঙ্গু। এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মুদি দোকানি রহিদুল ইসলাম জানান, ব্যবসায়ীক কাজে তিনি প্রতিদিন রাত করে বাড়ি ফিরেন। মশার কামড়ে তিনি তার শরীরে অতিরিক্ত দাগ দেখতে পান। তার কিছুদিন পর জ্বর, কাশি। একপর্যায়ে তিনি বাসায় থাকতে না পেরে হাসপাতালে ভর্তি হন। তারও চিকিৎসা চলছে গেল চারদিন ধরে।
শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মাহিদুর রহমান জানান, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তিনিসহ পরিবারের চারজন।ডেঙ্গু বা মশা নিধনে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকার কথা জানিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুল রহমান বলেন, “চলতি মাসেই সদর হাসপাতালে ৪৯ জনসহ উপজেলা স্বাস্থ ক্লিনিকগুলোতে ৩২৮ জন ডেঙ্গু রোগি ভর্তি হয়েছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালগুলোতে আক্রান্তরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গু মশার উৎস সৃষ্টি হচ্ছে।”
মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় হতাশ এই চিকিৎসক। প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিলে বাসায় চিকিৎসা না নিয়ে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, “আশ্রয়শিবিরে জমানো পানির পরিমাণ বেশি। সেখানকার মানুষজন এডিস মশা নিয়ে সচেতন নয়। তাছাড়া পরিকল্পিতভাবে প্লাস্টিক পন্য ব্যবহার না হওয়ায় এর বড় কারণ। যার ফলে পানি জমি থাকছে। সেখান থেকেই মূলত ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। ”
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. তোহা বলেন, “বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসছে। আমরা রোহিঙ্গাদের সচেতনতার পাশাপাশি ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংসে কাজ করছি। আশা করি, খুব শিগগির ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ একেবারে কমে আসবে।”
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “এত সংখ্যাক মানুষের একসঙ্গে বসবাস। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে অতিরিক্ত প্লাস্টিকের ব্যবহার। যার ফলে পানি জমছে। সেখান থেকে মশার উৎপাত বাড়ছে। এসমস্ত এলাকা চিহ্নিত করে সচেতনার কাজ চলছে। শিগগিরই এ সমস্যা সমাধানের পথে আসবে।”