বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ। ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ সোমবার মধ্যরাতে বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূল অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপকূল স্পর্শ করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ সন্ধ্যায় উপকূল স্পর্শ করেছে। মধ্যরাতে চট্টগ্রাম ও বরিশালের উপকূল দিয়ে এর মূল অংশ প্রবেশ করবে। ভোররাতের দিকে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব ক্রমশ কমতে থাকবে।
তবে সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের উপকূলে এবং অন্যান্য অঞ্চলেও মঙ্গলবার বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূলীয় এলাকার ১৩টি জেলায় মারাত্মকভাবে আঘাত হানবে। এটি আজ মধ্যরাত অথবা আগামীকাল ভোর নাগাদ খেপুপাড়ার কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
বুলেটিনে আরও জানানো হয়, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদীবন্দরসমূহকে ৩ নম্বর নৌ-বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম খুলনা এবং বরিশাল বিভাগসহ দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানবে। কেন্দ্র আঘাত করবে ভোরে। উপকূলীয় ১৩ জেলায় মারাত্মকভাবে ও ২ জেলায় হাল্কা আঘাত হানবে। তবে বরগুনার পাথরঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এটি উপকূলীয় অঞ্চলের ১৩টি জেলায় মারাত্মকভাবে এবং দু'টি জেলায় হালকাভাবে আঘাত হানবে। ১৩টি জেলার মধ্যে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী এবং ফেনী রয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বুলেটিন-৯ এ বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।