প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “পশু চিকিৎসা ও পশু গবেষণায়ও কর্মসংস্থানের যথেষ্ট সুযোগ আছে। আমাদের দেশে অনেকেই শখ করে পশুপালন করেন। কিন্তু তাদের যত্ন কিংবা চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের নেই। ভেটেরিনারি থেকে পাশ করা সবারই যে চাকরি হবে, তা নয়। তারা কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে পারেন।”
২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “যেমন গৃহপালিত পশুর জন্য পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে সেবা, চিকিৎসা, পরিচর্যার জন্য নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আমেরিকা-ইংল্যান্ডে তাদের জন্য আলাদা কর্নারও আছে। তাদের নাক-দাঁত পরিষ্কার করে দেওয়া, চিকিৎসা এসব ব্যবস্থাগুলো উন্নত দেশে আছে।”
পশু চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ, “আমাদের দেশে যারা এ ধরনের শিক্ষা দিচ্ছে তাদের জন্য কিন্তু চমৎকার একটা ব্যবসার সুযোগ হয়। আমাদের দেশে যারা পশুপালন করেন তারা বাইরে যেতে চাইলে কোথাও তার পোষা প্রাণীটিকে রেখে যাওয়ার জায়গা পান না। এদের জন্য বিদেশে কিন্তু ভালো বিশ্রামাগার আছে। সেখানে তাদের টাকা দিয়ে রাখতে হয়, তবু তো রাখা যায়। যারা ভেটেরিনারি থেকে পাশ করেন এসব প্রতিষ্ঠান করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন।”
পশুপালনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনি কাজে ব্যস্ত থাকায় সবসময় গৃহপালিত পশুর গোসল তথা যত্ন নিতে পারেন না। তাদের ওইসব পার্লারে বা বিশ্রামাগারে পাঠিয়ে দিলে সেখানে তারা সব সেবা করে দিতে পারে।”
শেখ হাসিনা আরও বলেন, “পশুর এ বিশ্রামাগার বা পার্লার করে আপনারা ভালো ইনকাম করতে পারেন। এতে কর্মসংস্থানের একটা নতুন দিগন্তও উন্মোচিত হবে।”
গাজীপুরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। ইতোমধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে ১২ মাসী কাঠালের জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কার করেছেন। উন্নত বিশ্বে এখন মাংস খেতে চায় না। তারা মাংসের পরিবর্তে কাঁঠালের তৈরি কাবাব, বার্গার, রোলস ইত্যাদি খাচ্ছে। কাঁঠালের তৈরি এসব খাবারের দামও কিন্তু অনেক বেশি। এসব খাবারের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে।”
দেশের উচ্চবিত্তরা বার্গার, রোল জাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এসব খাবারে মাংসের পরিবর্তে কাঁঠাল ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “কাঁঠালেও অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। কাঁঠালের কোনো অংশই ফেলনা নয়।”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “কৃষি শুধু উৎপাদন করলেই হবে না, তার সাথে প্রক্রিয়াজাতও অনুসরণ করতে হবে। যেমন ধান, চাল, গম, আটা, প্রাণিসম্পদ, পশুসম্পদ সবই কিন্তু একসাথে জড়িত। কাজেই সবক্ষেত্রেই আমরা গুরুত্ব দেই।”
“আমাদের নিজেদের শুধু খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করলে হবে না। দেশের মানুষের পুষ্টিটাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। পুষ্টি নিশ্চিত করতে গেলে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদন যাতে বাড়ে সে বিষয়ে গবেষণা এবং উৎপাদনের দিকেও আমরা বিশেষভাবে নজর দিচ্ছি এবং ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. গিয়াস উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক, শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।