নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার বিচার আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সময় পর্যন্ত এ মামলার আসামি আশিষ চৌধুরীর জামিন প্রশ্নে শুনানি মুলতবি থাকবে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজিবুর রহমান সম্রাট। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
এর আগে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন আসামি আশিষ রায় চৌধুরী। পরে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে চেম্বার আদালত তা স্থগিত করে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠায়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা করেন তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী। মামলার অভিযোগে বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা-কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতেই সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়।
জানা যায়, ঘটনার রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় ভেতরে ঢুকতে তাকে বাধা দেওয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবারও ক্লাবটিতে প্রবেশের চেষ্টা করলে সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান। আসামিদের মধ্যে আদনান খুনের পরপরই ধরা পড়েছিলেন।
মামলায় আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগ গঠনের পর আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করেন এবং এর আগে দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রায় দেন।
এতে মামলার বিচার কার্যক্রম চলতে আইনত আর কোনো বাধা থাকে না। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ওই রায়ের কপি আর নিম্ন আদালতে পৌঁছায়নি। যার কারণে শুরু হয়নি বিচার।
এদিকে বিষয়টির অনুসন্ধান শেষে ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি দৈনিক আজকের পত্রিকায় “নায়ক খুনের মামলা গুম” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। আর সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূইয়া রাসেল। তবে জবাব না পেয়ে রিট করেন তিনি।
ওই রিটের পর মামলার নথি খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এরপরই ফাইল চলে যায় বিচারিক আদালতে। শুরু হয় বিচার কাজ। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।