রাজধানীর বঙ্গবাজারে মার্কেটে আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকার কাপড়। শেষ সম্বল হিসেবে আগুনের ভেতর থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায়ীরা কিছু কাপড় বের করে আনতে পেরেছেন। তবে, রাস্তার পাশে এসব কাপড় রেখে যখন তারা ব্যস্ত, এ সময় কিছু অসাধু মানুষ সেখানে সহযোগিতার নামে যোগ দিয়ে কাপড় চুরি করে পালিয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমে আসা শুরু করলে যেসব কাপড় আগুনে পোড়েনি, সেগুলো দোকান ও গোডাউন থেকে বাইরে নিয়ে এসে জড়ো করছেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে একদল মানুষ যোগ দিয়েই কাপড় লুটপাট শুরু করে। কেউ হাতে করে আবার কেউবা ছোট বস্তায় ভরে কাপড় নিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিলেও কেউ কর্ণপাত করেনি।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী মো. এনায়েত বলেন, “আমরা যেভাবে পারছি আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি। সামনে দিয়া আমরা আগুন নিভাইতেছি, পেছন দিয়া আমাদের মালামাল চুরি হয়ে যাইতেছে। এমন বিপদের মাঝেও মানুষ এইসব করতে পারে! আমার ধারণাই ছিল না।”
বঙ্গবাজারের কাপড় ব্যবসায়ী একরাম বলেন, “লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছু বের করে আনতে পারছি, আবার সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। ঈদের জন্য সব পুঁজি খাটায়ে নতুন মালামাল তুলছিলাম, সব আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেছে। খালতো ভাইয়ের দোকান থেকে যা বের করে আনছি, তাও চুরি হয়ে গেছে। মাইকিং করে সবার উদ্দেশে বলা হয়েছে, আল্লাহর দোহাই লাগে মালামাল চুরি করিয়েন না, তবু কেউ শোনেনি।”
অনেক ব্যবসায়ী আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া কিংবা কিঞ্চিৎ পুড়ে যাওয়া মালামাল মাথায় করে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দিকে নিয়ে গিয়ে জড়ো করেন।
তৌকির আহমেদ নামের আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, “অনেকে হালকা পোড়া বা ভিজে যাওয়া কাপড় নিয়ে গেছে আমরা কিছু বলিনি। সবচেয়ে দুঃখ লাগল আমার ভালো মালামালের বস্তাটাও নিয়ে গেছে।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, বঙ্গবাজারের সামনে হোসপাইপের পানিতে ডুবে থাকা কাপড়ের স্তূপ সরিয়ে কাপড় সংগ্রহ করছেন কয়েকজন। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে জানান, ঈদে পরিবারের জন্য পোড়া কাপড় সংগ্রহ করছেন তারা। স্তূপ থেকে বেছে বেছে হালকা পোড়া কাপড় মতিন মিয়া নামের একজন দিনমজুর।
মতিন মিয়া বলেন, “আমরা পইড়ে থাকা হালকা পোড়া কাপড় নিচ্ছি। এর মধ্যে থেইকা যদি দু-একটা ভালো খুঁজে পাই, তাইলে নিজেও পরতি পারবো, ছেলেমেয়েরাও পরতি পারবে।”
বস্তা থেকে কাপড় চুরির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা ভালো কাপড় ধরি নাই। আমরা বস্তার ওদিকেও যাযই নাই। বস্তা মাথায় কাপড় চুরি করছে টোকাইরা আর আশেপাশের লোকজনরা। ওরা দল বেঁধে মাথায় করে নিয়ে গেছে।”
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তারা। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্মিলিত সাহায্যকারী দল, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও নৌ-বাহিনীর যৌথ তৎপরতায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
এই অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজারের বেশি দোকান পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এসব দোকানে কাজ করেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ।