Saturday, July 12, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

অডিও ফাঁস: অভিভাবকদের দিয়ে পা ধরানো সেই বিচারকের বক্তব্যে অমিল

সম্প্রতি বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডার জেরে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের দিয়ে পা ধরানোর অভিযোগ ওঠে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে

আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ০৫:০৮ পিএম

সম্প্রতি বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে এক বিচারক তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে সমালোচনার মুখে পড়েন।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

এর কয়েকদিন পর রুবাইয়া ইয়াসমিন তিন পাতার সই বিহীন একটি বিবৃতি সাংবাদিকদের কাছে পাঠান। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করার পাশাপাশি তার মেয়েকে র‌্যাগিং ও বুলিং করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন।

বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, ওই স্কুলে ভর্তির পর থেকে তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে নানাভাবে অপদস্থ করে কয়েকজন সহপাঠী। এসব ঘটনায় কাউকে শাসানো হয়নি বলেও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করেন তিনি। বিবৃতিতে বিচারকের মেয়ের নাম উল্লেখ না করলেও অন্য শিক্ষার্থীদের নাম, শ্রেণি ও রোল নম্বর উল্লেখ করা হয়।

তবে এ ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে অভিভাবকদের দিয়ে ওই বিচারকের পা ধরানোর ঘটনার দিনের একটি অডিও রেকর্ডিং ফাঁস হওয়ার পর। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে ধারণ করা ওই অডিও ক্লিপে অভিযুক্ত বগুড়ার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষক ও পুলিশের ভূমিকা স্পষ্ট হয়েছে বলে দাবি অভিভাবকদের।

বিচারক তার বিবৃততে কাউকে শাসানো হয়নি বলে উল্লেখ করলেও অডিও ক্লিপ বলছে ভিন্নকথা। অডিওতে বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনকে উচ্চস্বরে শিক্ষার্থীদের শাসাতে শোনা গেছে। একপর্যায়ে তিনি শিশু শিক্ষার্থীদের “থাপড়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দিব”, “জজ মানে জানিস তুই, জজ শব্দ বানান করতে পারবি তুই? বানান করে লিখে দেখা” এমন অনেক আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করেন।

এ সময় ওই বিচারক এবং সেখানে উপস্থিত বগুড়া সদর থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর (অপারেশন) আবদুল মোন্নাফ মামলার হুমকি দেন। তাদের কথায় সমর্থন দেন প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন, সহকারি প্রধান শিক্ষক আনারুল ইসলাম, সিনিয়র শিক্ষিকা মোবাশ্বেরা বেগম, মোসলেমা খাতুন ও এক আইনজীবী অভিভাবক। এ সময় ভুক্তভোগী অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারা বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে অনুরোধ জানান। 

অডিও ক্লিপটি ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ওই বিচারকের মিথ্যা বিবৃতি প্রত্যাহারের পাশাপাশি এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন। 

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তদন্ত চলাকালে প্রসঙ্গটি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য বগুড়া জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হজরত আলী ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপের কথা শুনেছেন। তারা তদন্ত প্রায় শেষের দিকে নিয়ে এসেছেন। তদন্তে এ ঘটনায় সম্পৃক্ত কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবকের নাম এসেছে। ওই অডিও ক্লিপসহ সকল বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, এ ঘটনায় বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না, সুশাসনের জন্য নাগরিক বগুড়া শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন। তাদের দাবি, জড়িতদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শিশুমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্ভবনা রয়েছে।”

এ বিষয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, “তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই ঘটনায় যুক্ত সকলকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।”

জানা গেছে, বগুড়ার সাবেক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের মেয়ে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়াকে কেন্দ্র করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীদের সঙ্গে সহপাঠী জজের মেয়ের ফেসবুকে দেওয়া পোস্ট নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি হয়।


আরও পড়ুন: মেয়ে সহপাঠীদের বললো ‘বস্তি', বিচারক মা অভিভাবকদের দিয়ে ধরালেন পা 

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী সব শিক্ষার্থীর পালাক্রমে শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেওয়ার কথা থাকলেও বিচারকের মেয়ে কখনোই শ্রেণিকক্ষ ঝাড়ু দেয় না। বিষয়টি নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয় তার।

এই ঘটনার জেরে ২০ মার্চ রাতে ফেসবুকে সহপাঠীদের কটাক্ষ করে একটি পোস্ট লেখে বিচারকের মেয়ে।  পোস্টে সে বলে, “তোরা বস্তির মেয়ে। আমার মা জজ। তোদের মায়েদের বল আমার মায়ের মতো জজ হতে।” এতে কয়েকজন সহপাঠী প্রতিবাদ জানায়।

মেয়ের কাছে বিষয়টি জানতে পেরে বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনকে ২১ মার্চ ওই ছাত্রীদের অভিভাবকদের ডাকতে বলেন। প্রধান শিক্ষিকার ডাকে বেলা ১১টার দিকে চার ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা স্কুলে প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে আসেন। ওই সময় সেখানে থাকা বিচারক মেয়ের সহপাঠী ও অভিভাবকদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও জেলে পাঠানোর হুমকি দেন। এছাড়া তিনি দুই অভিভাবককে তার পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

খবরটি জানার পর প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা খাতুনকে ২১ মার্চ র বিকেল ৩টার দিকে ক্লাস বর্জন করে স্কুলের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। দু দফায় রাত ৮ট পর্যন্ত অবরোধ চলে। 

ঘটনাস্থলে এসে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, হাইকোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয় ঘটনাটি জেনেছেন। বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

   
Banner

About

Popular Links

x