চলমান বন্যায় সিলেট বিভাগে মোট ২২ জনের মৃত্যু খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হিমাংশু লাল রায় ঢাকা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্ঘলবার (২১ জুন) তিনি বলেন, সিলেটে ১৪, সুনামগঞ্জে পাঁচজন ও মৌলভীবাজারে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে ডুবে মৃত্যুর পাশাপাশি ভূমি ধস, সাপের কামড় এবং অন্যান্য কারণে তারা মারা গেছেন।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। দুই জেলার প্রায় ৮০% এলাকা তলিয়ে গেছে পানিতে। সোমবার পর্যন্ত পানিবন্দি ছিলেন অন্তত ৪০ লাখ মানুষ। বন্যায় বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ফেরার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর তথ্য জানা যাচ্ছে।
মৃতদের মধ্যে মঙ্গলবার সর্বশেষ জৈন্তাপুরে পানিতে ডুবে মা ও ছেলে মৃত্যু হয়। জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগীর জানান, মৃতরা হলেন মহালীখলা গ্রামের মৃত আজব আলীর স্ত্রী নজমুন্নেছা (৫০) ও তার ১৪ বছর বয়সী ছেলে রহমান মিয়া।
এছাড়া, এদিন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর গ্রামের বিপ্লব মিয়া (৪৫) নামের আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলে গুরুতর আহত বিপ্লবের মৃত্যু হয়। বন্যাদুর্গতদের জন্য হেলিকপ্টারে করে বিমানবাহিনীর দেওয়া ত্রাণসামগ্রী নিতে গিয়ে আহত ছয়জনের মধ্যে ছিলেন বিপ্লব মিয়াও।
বিশ্বনাথের সাংবাদিক এমদাদুর রহমান মিলাদ জানান, এ পর্যন্ত উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ আছে একটি মেয়ে শিশু। শুক্রবার বিকেলে রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল জমশেরপুর গ্রামের জামাল উদ্দিনের স্ত্রী তার এক বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নৌকায় করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে রামপাশা বাজারের পশ্চিমের হাওরে নৌকাডুবিতে শিশুটি পানির স্রোতে মায়ের হাত থেকে পড়ে যায়। তাকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার দিন দুপুরে উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের বাওনপুর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা শামিম আহমদ (৬০) আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শ্বশুরবাড়ি ফিরছিলেন। পথে পানিতে ডুবে তিনিও নিখোঁজ হন। রবিবার দুপুরে স্থানীয়রা মরা সুরমা নদীর তীরবর্তী মিরেরগাঁও গ্রাম থেকে তার ভাসমান লাশ উদ্ধার করেন।
একই দিন বিকেলে খাজাঞ্চী ইউনিয়নের চন্দ্রগ্রাম গ্রামের অমর চন্দ্র দাসের ছেলে অনিক দাস ওরফে মোহন দাস (২০) বাড়ি থেকে সিলেট নগরীতে আসার পথে বাড়ির পার্শ্ববর্তী গ্রামের মসজিদের সামনে স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হন। রবিবার বিকেলে তার লাশ পাওয়া যায়।
শুক্রবার দুপুরে দশঘর ইউনিয়নের বাইশঘর গ্রামের মতছিন আলীর স্ত্রী লিমা বেগম (৩৫) ও শ্যালিকা সিমা বেগম (২৫) বাড়ির পার্শ্ববর্তী খালে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হন। ওইদিন বিকেলে তাদের লাশ পাওয়া যায়। একই দিন পানিতে ডুবে মারা যান উপজেলার সিংরাওলী গ্রামের ইয়াসিন আলীর ছেলে আলতাবুর রহমান (৪৫)।
নিহত লিমা বেগম ও সীমা বেগমের মামা সিলেট নগরীর ধামালিপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, বিশ্বনাথের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। নিহত দুই ভাগ্নিকে তাদের বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারায় বন্যার পানিতে ডুবে আবুল কাশেম নামের এক ট্রাফিক কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার তার এক আত্মীয়ের দাফনের অংশ নিয়ে ফেরার পথে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে, বানের পানিতে ডুবে কানাইঘাট গ্রামের নারাইনপুর গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে ফয়সল আহমদের মৃত্যু হয়েছে। থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, বজ্রপাতে ছেলেটি নিখোঁজ ছিল বলে তাদের কাছে খবর ছিল। রবিবার তার মৃত্যুর কথা জানা গেছে।
শান্তিগঞ্জ থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, উপজেলার সদরপুরে বন্যার পানির স্রোতে নিখোঁজ হন দুই ব্যক্তি। তাদের লাশ সোমবার স্থানীয় ডুংরিয়ায় ভেসে ওঠে। তারা হলেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর গ্রামের মৃত জাফর আলীর ছেলে (৩২) ও জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ গ্রামের মৃত লোকমান মিয়ার মেয়ে লুবনা খাতুন (১৮)। তারা সম্পর্কে শ্যালিকা-ভগ্নিপতি। পানিবন্দি অবস্থা থেকে শ্যালিকাকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসার পথে নৌকাডুবির এ ঘটনা ঘটে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালেদুজ্জামান দুজনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জগন্নাথপুরের সাংবাদিক অমিত দেব জানান, বন্যার পানিতে নৌকা থেকে পড়ে যাওয়া আনহার মিয়া (৩০) নামে এক ফল ব্যবসায়ীর লাশ সোমবার উদ্ধার হয়েছে। শনিবার তিনি নৌকা থেকে পড়ে নিখোঁজ হন। তার বাড়ি উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের এরালিয়া বাজার এলাকায়। উপজেলার অনেক জায়গায় লাশ দাফনের জায়গা না থাকায় হাওরে লাশ ভেসে আসতে দেখা গেছে।