চট্টগ্রাম নগরীর “মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টার”র নেই স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন। সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা” কোনো মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেননি। তারা সবাই ব্র্যাক থেকে মাত্র ১৩ দিনের ধাত্রীর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
চলতি সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটিতে জন্ম নেওয়া দুই যমজ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে জেলা সিভিল সার্জন।
এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলা করেছে। সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকেও এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার পুলিশের করা মামলায় প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িত বৃষ্টি রানী দে ও নাসরিন বেগম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নগরীর ডবলমুরিং থানার ঝরনাপাড়া এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালটিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের বিল পরিশোধ না করায় দুই যমজ শিশুকে আটকে রাখার পর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় তদন্তের পরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টার নামে হাসপাতালটির স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো অনুমোদন নেই। এমনকি যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তাদেরও কোনো চিকিৎসা সনদ নেই। তবে তারা ধাত্রী হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সনদ দেখিয়েছেন। এভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যারা খুলেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ডবলমুরিং থানা পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, “আমরা অভিযোগ পেয়ে বুধবার ওই প্রতিষ্ঠানে গেলে অভিযুক্তরা চিকিৎসা পেশার উপযুক্ত কোনো সনদ দেখাতে পারেননি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছিল।”
এ বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ওসি সাখাওয়াত হোসেন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, “বিল পরিশোধ না করায় দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখায় মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টারে জন্ম নেওয়া দুই যজম শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করে শিশুর স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তবে এ ঘটনায় নিহত শিশুর স্বজনরা থানায় মামলা করেনি। এ কারণে পুলিশ বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে মামলা করেছে। সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকেও এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
যমজ শিশুর পিতা মনির হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে আমার স্ত্রীকে মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টারে ভর্তি করি। আধাঘণ্টা পর যমজ সন্তানের জন্ম হয়। কিছুক্ষণ পর নবজাতকদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন ক্লিনিকের চিকিৎসক। তখন ক্লিনিক থেকে ১০ হাজার টাকা বিল দেওয়া হয়। আমি পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলি, বাচ্চা তো নরমাল ডেলিভারিতে হয়েছে। আপাতত পাঁচ হাজার রাখেন, বাকি টাকা বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তির পর জোগাড় করে এনে দেবো। কিন্তু এরই মধ্যে নবজাতকদের অক্সিজেন মাস্ক খুলে রাখেন তারা। সেইসঙ্গে অন্য হাসপাতালেও নিতে দেননি। ফলে আমার দুই সন্তান মারা যায়।”