বাজারে প্রসাধন সামগ্রীর অধিকাংশ নকল বলে দাবি করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আর বিদেশ থেকে যেসব প্রসাধনী আসে, তাও বৈধভাবে আসছে না বলে তাদের পর্যবেক্ষণ।
প্রসাধনী পণ্যের এমন বাজার ব্যবস্থার জন্য শুল্ক কাঠামোকে দায়ি করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন, ট্যাক্স ব্যবস্থাপনার কারণে ভেজাল পণ্য বাড়ছে। বৈশ্বিক বিবেচনায় শুল্ক মূল্যায়নের জন্য লেনদেনের মূল্য বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (১২ অক্টোবর) ঢাকার কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে কসমেটিকস পণ্য আমদানিকারক, বাজারজাতকারী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই দাবি জানান তারা।
বৈঠকে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন, “বাংলাদেশে বিদেশ থেকে কসমেটিক পণ্যগুলো আসে রেভিনিউ ফাঁকি দিয়ে। এছাড়া বাজার ভেজাল পণ্যে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। বাইরের দেশে ভেজাল পণ্য বিক্রির কোনো সুযোগই নেই। অথচ আমাদের দেশের বেশিরভাগ কসমেটিক পণ্যই ভেজাল। ব্যবহারকারীরা চর্মরোগসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।”
অধিদপ্তরের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, বেশিরভাগ পণ্যের আমদানিকারকের স্টিকার এবং এমআরপি দেওয়া থাকে না, আবার প্রাইসগান মেশিনের সাহায্যে খুচরা বিক্রেতারা নিজেরাই এমআরপি নির্ধারণ করে থাকে। আমদানিকারকবিহীন প্রসাধনীর ক্ষেত্রে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমদানিকারকের নাম থাকলেও তাদের দেওয়া এমআরপি কেটে নতুন করে বেশি দাম লেখা হয়। আবার দেশের ভেতরে তৈরি নকল প্রসাধনী সামগ্রীকে বিদেশি বলে বিক্রি করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বেশিরভাগ ফেইস ক্রিম এবং হোয়াইটনিং ক্রিমের গায়ে বিএসটিআই অনুমোদনের সিল থাকে না। অনেক সময় বারকোড নকল করার মতো ঘটনাও ঘটে।”
মতবিনিময় সভায় কয়েকজন আমদানিকারকরা তাদের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ফ্রেইট এজেন্সিগুলো অবৈধভাবে অনেক পণ্য ছাড়িয়ে নিয়ে বাজারে ছেড়ে দেয়। এতে সুষ্ঠু ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কোনো কোনো সময় তারা যে পরিমাণ পণ্য আনার ঘোষণা দেন, তার চেয়েও বেশি পরিমাণে পণ্য আনেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের “ম্যানেজ” করে জরিমানা ছাড়াই তা বন্দর থেকে বের করে আনেন।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের প্রতিনিধি কাজী আবদুল হান্নান বলেন, “ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বিদ্যমান আইনেও সংশোধন আনা দরকার। বিশেষ করে ৪১ ও ৪২ নম্বর ধারার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা বেশি জরুরি। তা না হলে নকল পণ্যের ব্যবসা থামানো সহজ হবে না।”
শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে
শুল্ক কাঠামো পরিবর্তন না করলে প্রসাধন সামগ্রী খাত থেকে ভেজাল নির্মূল করা কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।
কসমেটিক্স পণ্যের আমদানিকারক ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসাইন বাবলু বলেছেন, “লাগেজ ব্যবসায়ীরা তুলনামূলক কম শুল্ক দিয়ে বিদেশি পণ্য আনেন। আমদানিকারকদের হয়ে এক্ষেত্রে ফ্রেইট এজেন্সিগুলো ম্যানেজ কারবার করে থাকে। হয়তো এক হাজার কেজিতে মোট ১০ লাখ টাকা ট্যাক্স এলে দেখা যায় তারা ৫০০ কেজির ট্যাক্স বৈধভাবে দেয়, আর বাকি ৫০০ কেজির ট্যাক্স নিজেরা কম-বেশি ভাগ করে নেয়।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এমন অবৈধ কাজে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ তুলে বাবলু বলেন, “সেগুনবাগিচায় হরিলুটের আড্ডা বন্ধ করতে না পারলে সুষম ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের কোনো চেষ্টা কোনো কাজেই আসবে না।”
মতবিনিময় সভা শেষে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, “ভেজাল প্রসাধনী পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। বাজার পরিস্থিতি একদিনেই পরিবর্তন করা যাবে না। ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনা করে আমরা কিছু রেজুলেশন ঠিক করেছি, যেগুলো সরকারের কাছে উত্থাপন করা হবে।”
ভোক্তা অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে প্রসাধনীর বাজার তদারক করে রাজধানীর বনানী, গুলশান, মোহাম্মদপুর, কারওয়ান বাজার, চকবাজার ও মৌলভীবাজারে অভিযান চালিয়ে ১০টি দোকান থেকে মোট ৮ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।