বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি কাঁচা আমের জাত তাইওয়ানের গ্রিন ম্যাঙ্গো’র চাষ বাংলাদেশে সফলভাবে উৎপাদন করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতোল হর্টিকালচার সেন্টারে কৃষি কর্মকর্তারা সফলভাবে এর উপযোগিতা যাচাই করেছেন। এরপরে এই আম বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য দেশের ৭৩টি কেন্দ্রে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গ্রিন ম্যাঙ্গো বা ‘‘সবুজ আম’’ কাঁচা অবস্থায় মিষ্টি হয় ও পাকলে এর মিষ্টতা ও স্বাদ আরও বেড়ে যায়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে কোনো স্থানীয় জাতের আম বাজারে পাওয়া যায় না বলে ফসল কাটার সময় চাষিদের জন্য এই আম বাড়তি সুবিধা বয়ে আনতে পারে।
এছাড়া এই জাতটি উচ্চ ফলনশীল। এক বিঘা জমিতে প্রায় ১০৫টি আমের চারা রোপণ করা যায়। এতে ২-৩ বছর পরেই অন্তত ১,৫০০ কেজি আম উত্তোলন করা যাবে। প্রতিটি আম ৬০০-৭০০ গ্রাম হয়ে থাকে। সে হিসাবে প্রতি কেজি মূল্য ৫০০ টাকা বিবেচনায় একজন কৃষক এক বিঘা জমি থেকে খরচ বাদে প্রায় ৫ লাখ টাকা আয় করতে পারেন।
তাইওয়ান, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে এই আম বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টির উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি প্রকল্পে ডা. মেহেদী মাসুদ থাইল্যান্ড থেকে বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি আমের একটি কাটিং গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে এনে দেন। এরপরেই এই পরীক্ষা শুরু হয়।
পরে গবেষকরা এই আমের চারাকে বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী করে তোলেন। এ বছর ওই গাছে প্রথম আম ধরেছে।
গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, গাছে কোনো পোকামাকড় বা রোগবালাই দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, “এই আম কাঁচা খাওয়া যায়। তাই এই আমের নাম রাখা হয়েছে ‘‘সবুজ আম’’। পাকলে আমের মিষ্টতা ও স্বাদ বহুগুণ বেড়ে যায়। তাছাড়া এই আমের ৯০%ই ভোজ্য। এই আমে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও অন্যান্য ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান রয়েছে।”
আমিনুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের আবহাওয়া এই আম চাষের জন্য উপযোগী। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের উদ্যানপালন কেন্দ্রে একটি মাতৃ বাগান তৈরি করেছি। এখান থেকে আমরা দেশের ৭৩টি হর্টিকালচার সেন্টারে চারা পাঠানো শুরু করেছি। দেশের সব হর্টিকালচার সেন্টারে এই আমের মাতৃ বাগান থাকবে। স্থানীয় কৃষকদের জন্যও আমরা চারা উৎপাদন করব। বাংলাদেশে এই আমের বাণিজ্যিক চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।”
ডা. মেহেদী মাসুদ জানান, বছরব্যাপী ফল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় তারা বিদেশ থেকে ১৬টি আমের জাত এনেছেন। এর মধ্যে, ক্যাটিমন জাতটি কৃষকদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কারণ এটি থেকে বছরে তিনবার ফল পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, “আমি থাইল্যান্ড থেকে কাঁচা মিষ্টি আম এনেছি। এর উৎপত্তি তাইওয়ান থেকে। গোপালগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা এর নাম দিয়েছি ‘‘সবুজ আম’’। এটি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি বড় ব্যবসা নিয়ে আসবে।”