কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে তিন বছর স্থগিত থাকার পর ফের বসতে যাচ্ছে বিশ্ব-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন “ঢাকা লিট ফেস্ট”। আগামী ৫ জানুয়ারি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দেশি-বিদেশি সাহিত্যের সবচেয়ে বড় এই আসরের উদ্বোধন হবে। এতে উপস্থিত থাকবেন নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ, সারাহ গিলবার্টসহ আরও অনেকেই। এরইমধ্যে চলছে রেজিস্ট্রেশন।
ঢাকা লিট ফেস্টের দশম আসরটি যথারীতি হয়ে উঠবে দেশি-বিদেশি সাহিত্যিক, চিন্তাবিদ, লেখক, সাংবাদিক, কবি, নির্মাতাদের মিলনমেলা।
বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আগামী ৫ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা লিট ফেস্ট উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ, ভারতীয় লেখক ও সাহিত্য সমালোচক অমিতাভ ঘোষ। চার দিনের এই আয়োজনে অংশ নেবেন পাঁচ মহাদেশের পাঁচ শতাধিক বক্তা।
যা যা থাকছে এবারের ঢাকা লিট ফেস্টে
আয়োজকরা বলছেন, ঢাকা লিট ফেস্টে এবারের আলোচনায় থাকছে বৈচিত্র্য। এর অংশ হিসেবে বিজ্ঞান, মহামারি, উদ্ভাবন, প্রাণ ও প্রকৃতি, মুক্তিযুদ্ধ এবং চলচ্চিত্র নিয়ে সেশন রয়েছে। বিজ্ঞান এবং উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা করতে থাকছেন করোনা ভাইরাসের জিন রহস্য উন্মোচনকারী বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। মহামারির প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবেন অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার সহ-উদ্ভাবক সারাহ গিলবার্ট। সব মিলিয়ে এবার থাকবে কথোপকথনের বৈচিত্র্যময় মিশ্রণ।
“হাওয়া” সিনেমার আলোড়ন তোলা গান “সাদা সাদা কালা কালা”র পেছনের গল্প শোনাবেন পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন এবং সংগীতশিল্পী শিবু কুমার শীল। সাংবাদিকতার পরিবেশ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেলসহ দেশবরেণ্য সাংবাদিকরা। এছাড়া রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সেশন, কবিতা চর্চা, শিশু ও তরুণদের জন্য আকর্ষণীয় আয়োজন, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং নাট্য, সংগীত ও গল্পকথন পরিবেশনা।
ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্ জানান, দশম আসরে সশরীরে অংশ নেবেন নোবেলজয়ী লেখক ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত বিভিন্ন পুরস্কার বিজয়ী বক্তারা। তাদের মধ্যে অন্যতম ২০২১ সালে নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ।
এছাড়া আসছেন ২০২২ সালের বুকারজয়ী কথাশিল্পী শেহান কারুনাতিলাকা ও গীতাঞ্জলি শ্রী (আন্তর্জাতিক ক্যাটাগরি) । আরও থাকছেন নিউস্ট্যাড ইন্টারন্যাশনাল, পেন/পিন্টার, প্রিক্স মেডিসিস, অস্কার, উইন্ডহাম ক্যাম্পবেল পুরস্কার, অ্যালবার্ট মেডেল, ওয়াটারস্টোন চিলড্রেনস বুক প্রাইজ, আগা খান অ্যাওয়ার্ডসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননাপ্রাপ্তরা।
ঢাকা লিট ফেস্ট উপভোগে যা করতে হবে
প্রথমবারের মতো ঢাকা লিট ফেস্ট উপভোগের জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে টিকিট কেনার ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় পাওয়া যাবে এগুলো।
এবার শুধু ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের প্রবেশে কোনও টিকিট লাগবে না। দর্শনার্থীর বয়স ১২ বছরের বেশি হলে টিকিট বাধ্যতামূলক থাকছে।
যেসব স্থানে টিকিট পাওয়া যাবে– ঢাকা লিট ফেস্ট অফিস (নিকেতন, ঢাকা), মীনা সুইটস (বনানী এক্সপেরিয়েন্স জোন এবং পান্থপথ শাখা), মীনা বাজার (ধানমন্ডি ২৭, উত্তরা আউটলেট, ইসিবি চত্বর আউটলেট, শান্তিনগর আউটলেট, বনশ্রী এবং মগবাজার আউটলেট), বাংলার মিষ্টি (বনানী ও গুলশান আউটলেট), আড়ং (মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা আউটলেট) এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।
www.dhakalitfest.com লিংকে ঢুকে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এজন্য উল্লেখ করতে হবে দর্শনার্থীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, পেশা, মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানা। সব তথ্য সঠিকভাবে দেওয়ার পর টিকিট ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে হবে।
ঢাকা লিট ফেস্টের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে দৈনিক জনপ্রতি ৫০০ টাকা। তবে একসঙ্গে চার দিনের টিকিট নিতে চাইলে ছাড় মিলবে ৫০০ টাকা, সেক্ষেত্রে একেক জন দর্শনার্থী ১৫০০ টাকায় চারদিনের টিকিট পেয়ে যাবেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে সুখবর। তারা প্রতিজন ২০০ টাকায় টিকিট কিনতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের বেলায় একসঙ্গে চার দিনের টিকিট কিনলে লাগবে ৫০০ টাকা, অর্থাৎ তাদের জন্য থাকছে ৩০০ টাকা ছাড়।
এছাড়া আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক (স্পন্সরশিপ) হিসেবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকছে। কেউ ৩ হাজার টাকা মূল্যের টিকিট কিনলে ঢাকা লিট ফেস্টের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিবেচিত হবেন। এক্ষেত্রে একসঙ্গে চার দিনের টিকিট পাওয়া যাবে ১০ হাজার টাকায়। পৃষ্ঠপোষক ক্যাটাগরির আওতায় পাওয়া যাবে ফ্রি পার্কিং সুবিধা, ভিআইপি আইডি কার্ডসহ ঢাকা লিট ফেস্টের বিশেষ লাউঞ্জে প্রবেশের সুযোগ, যেখানে থাকছে লাঞ্চের ব্যবস্থা। কিন্তু লিট ফেস্টের সেশনগুলোতে তারা বিশেষ কোনও সুবিধা পাবেন না। সেখানে সব দর্শনার্থীর সমান অধিকার থাকবে।
যা বললেন আয়োজকরা
উৎসবটির পরিচালক ড. কাজী আনিস আহমেদ বলেন, “আমরা লিট ফেস্টকে দেখি ফেস্টিভ্যাল অব আইডিয়া হিসেবে। যদিও এখানে সাহিত্য একটি মুখ্য বিষয়। এবারের আয়োজনে আমরা চলচ্চিত্র নিয়েও আলাপ করবো। অস্কারজয়ী অভিনেত্রী টিল্ডা সুইনটন আসছেন। সেই সঙ্গে আমাদের দেশীয় নির্মাতাদের রেখেছি। ওটিটি নিয়ে এখন চারদিকে অনেক আলোচনা চলছে। তাই ওটিটি নিয়েও আমরা কথা বলবো।”
ড. কাজী আনিস আহমেদ যোগ করেন, “আমরা বিজ্ঞান নিয়েও আলোচনা করবো। এবার অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবক সারাহ গিলবার্ট আসছেন। এছাড়া আমরা ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীগুলোর ভাষা উপস্থাপনের চেষ্টা করবো। আরেকটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ হলো দুই রোহিঙ্গা কবিকে রাখা। শিশুদের জন্য আমাদের অনেক উপস্থাপনা থাকছে। আমরা ঢাকাকেন্দ্রিক না থেকে ঢাকার বাইরের যেসব লেখক আছেন, তাদের অংশগ্রহণ রাখার চেষ্টা করেছি সবসময়। একইসঙ্গে নারী লেখকরা যথাযথ প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছেন কিনা সেদিকে নজর রেখে পুরো আয়োজন সাজানো হয়েছে।”
গত ২৯ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রেশন ও টিকিট প্রাপ্তি নিয়ে ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ বলেন, “করপোরেট বা সরকারি স্পন্সরশিপের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ঢাকা লিট ফেস্টকে আরও টেকসই করতে আমরা দর্শক-শ্রোতা ও পাঠকদের সহায়তা চাই। আমাদের আশা, সাহিত্যপ্রেমীরা এই সহনীয় মূল্যের টিকিট দিয়ে শরিক হিসেবে লিট ফেস্টে শামিল হবেন। বিদেশে অনেক ফেস্টিভ্যালে রেজিস্ট্রেশনের পরও প্রতিটি সেশনের জন্য আলাদা ফি দিতে হয়। সেখানে আমরা এক টিকিটেই সকল সেশন উপভোগের সুযোগ রাখছি। আমরা মনে করি, সাধারণ ও শিক্ষার্থীদের টিকিটের মূল্য অনেক সহনীয় রাখা হয়েছে। আর বিশেষ টিকিটের মাধ্যমে সাহিত্যপ্রেমীদের একধরনের স্পন্সরশিপের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।”
ঢাকা লিট ফেস্টের টাইটেল স্পন্সর বাংলা ট্রিবিউন এবং ঢাকা ট্রিবিউন। সেই সঙ্গে প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে আছে দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড এবং স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে থাকছে ব্রিটিশ কাউন্সিল।