বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ৫০০ টন সারবোঝাই এমভি শাহাজালাল এক্সপ্রেস নামের একটি লাইটার জাহাজ পানিতে ডুবে গেছে। ওই ঘটনায় চালকের গাফিলতি পেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে এ ঘটনায় চালকের ভুল পাওয়া গেছে।
দু'একদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালে বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন।
তবে গাফিলতির ঘটনায় অভিযুক্ত জাহাজচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ।
বর্তমানে ওই নৌ-চ্যানেল নিরাপদ আছে বলেও জানান তিনি।
ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে ডুবে যাওয়া সারবোঝাই লাইটার জাহাজ এমভি শাহাজালাল এক্সপ্রেস-২-এর চালক ওবায়দুর রহমানের গাফিলতি পাওয়া গেছে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “ওই সময় ঘন কুয়াশা থাকায় চালকের উচিত ছিল জাহাজটি না চালিয়ে কোনও এক জায়গায় নোঙর করে রাখা। কিন্তু সেটি না করে হারবাড়িয়া-৯ এলাকায় এমভি ভিটা অলিম্পিক জাহাজ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন সারবোঝাই করেন এমভি শাহাজালালের চালক। ওই ৫০০ মেট্রিক টন সার নিয়ে লাইটার জাহাজটি যশোরের নওয়াপাড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। হারবাড়িয়া-৮ এলাকায় ‘সুপ্রিম ভ্যালর' নামের একটি বিদেশি জাহাজকে অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা করেন চালক। এ সময় ঘন কুয়াশায় লাইটার জাহাজটি বিদেশি ওই জাহাজকে ধাক্কা দেয়। এতে সার নিয়ে লাইটারটি ডুবে যায়।”
এ ঘটনায় বুধবার (২৫ জানুয়ারি) ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করে বন্দর কর্তৃপেক্ষের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন শাহাদাৎ হোসেন, পাইলট ফারুক আহম্মেদ এবং মেরিন বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. রিয়াদ খাঁন তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।
ক্যাপ্টেন শাহীন মজিদ বলেন, “দুর্ঘটনার পর বন্দরের নৌ-চলাচলের চ্যানেল স্বাভাবিক আছে। ডুবে যাওয়া লাইটার জাহাজের সার্ভে সনদ ও রেজিস্ট্রেশন সবই ঠিক আছে। ডেপুটি হারবার মাস্টারের নেতৃত্বে একটি দল দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করেছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারের জন্য মালিকপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ডুবে যাওয়া এমভি শাহাজালাল এক্সপ্রেসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই শিপিং লাইন্সের পরিচালক আজাহার সিদ্দিক বলেন, “জাহাজটি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় চালক ওবায়দুর রহমানের গাফিলতি ছিল না। তিন দক্ষ চালক। অন্য কোনও কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
দুর্ঘটনার যে কারণ বন্দর কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছেন তার ব্যাখ্যায় আজাহার সিদ্দিক বলেন, “কোনো বিদেশি জাহাজ থেকে পণ্যবোঝাইয়ের পর সেখানে এক মুহূর্ত থাকতে দেওয়া হয় না। কাজেই সেখান থেকে অন্যত্র অবস্থান নেওয়ার জন্য ঘন কুয়াশায় জাহাজটি চালিয়ে স্থান খুঁজছিলেন চালক।”
তিনি আরও বলেন, “বন্দর কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া ১৫ দিনের মধ্যে লাইটার জাহাজটি উঠানো সম্ভব হবে না। আরও অনেক সময় লাগবে। জাহাজ থেকে সার সরাতেই এক সপ্তাহ সময় লাগবে। পরে জাহাজ তোলার কাজ শুরু করতে হবে।”
এর আগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকায় সারবোঝাই এমভি শাহাজালাল এক্সপ্রেস-২ নামের লাইটার জাহাজটি ডুবে যায়। জাহাজে নয় জন কর্মচারী ছিলেন। সবাইকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন।
মোংলা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ৫০০ মেট্রিক টন সার নিয়ে শাহাজালাল এক্সপ্রেস-২ লাইটার জাহাজটি যশোরের নওয়াপাড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল।
হারবাড়িয়া-৮ এলাকায় সুপ্রিম ভ্যালর নামের একটি বিদেশি জাহাজকে অতিক্রম করে যাওয়ার চেষ্টা করে জাহাজটি। এ সময় ঘন কুয়াশায় লাইটার জাহাজটি বিদেশি ওই জাহাজকে ধাক্কা দেয়। এতে জাহাজটির নিচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইঞ্জিনরুমে পানি ঢুকে পড়ে। আতঙ্কিত হয়ে জাহাজের নয় জন কর্মচারী নদীতে ঝাঁপ দেন।
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে হারবাড়িয়া নৌ-চ্যানেলে সারবোঝাই লাইটার জাহাজ ডুবে যাওয়ার ফলে জলজ সম্পদের মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ওই জাহাজের জ্বালানি তেল পানিতে মিশে সুন্দরবনের আশপাশের পরিবেশ দূষণ করবে। একইসঙ্গে বারবার লাইটার জাহাজ ডুবির ফলে বন্দরের নাব্যতা সংকট বৃদ্ধি পাবে।