সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, “প্রত্যাশা ও সফলতার বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। মঙ্গল শোভাযাত্রা আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। ইউনেস্কোর ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়েছে এ আয়োজন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়েছে। জাতির পিতা যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন।”
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ শেষে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন৷
নিরাপত্তা বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা দেখেছি- জোট সরকারের সময় রমনার বটমূলে বোমা হামলা হয়েছে। বোমা হামলা তাদের সরকারের একটি অংশ হয়ে উঠেছিল। এক সাথে ৬৪ জেলায় বোমা হামলা হয়েছিল। সেই জায়গাটি থেকে নিরাপত্তার জন্য, আপনি জানেন হুমকিও এসেছে, একজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট পর্যন্ত করেছেন মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করার জন্য। নিরাপত্তাবেষ্টনী যেটা দেখছেন, আগেও এটা ছিল।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “সবাইকে শুভ নববর্ষ জ্ঞাপন করছি। এই মঙ্গল শোভাযাত্রা আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এবং এখন এটি ওয়ার্ল্ড মেমোরি অব হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত। ফলে এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। বিশ্বের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর জন্য এটি অসাধারণ সম্পদ। সেটির রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষণ ও সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এখন সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। এবং এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টি ও দর্শনের প্রতিফলন।”
তিনি আরও বলেন, “এটির মাধ্যমে একটি অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ার বার্তা সবসময়ই দিয়ে থাকে। আতঙ্ক যা ছিল তার প্রতিবাদে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আজকে শোভাযাত্রায় এতো মানুষ যে, আমাদের বেশি হাঁটতে হয়নি। সকল ধরনের উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এটি একটি মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক আহ্বান। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সকলে মিলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়বো, যাকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ'।”
প্রতিপাদ্যের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নববর্ষ উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য ( প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “এবার প্রতিপাদ্য হলো- ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি'। অর্থাৎ সুষ্ঠু পৃথিবীর জন্য তুমি পানি বর্ষণ করো। যাতে এই উত্তপ্ত বসুন্ধরা স্নিগ্ধ হয়, শান্ত হয়, মনোরম হয়, সুন্দর হয় এবং ফুলে ফলে ভরে উঠে।”
করোনাভাইরাস মহামারি কাটিয়ে এবার বিধি-নিষেধের বেড়াজাল ছাড়াই নতুন বছর বরণ করছে বাঙালি। সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর আয়োজনে তপ্ত এই বৈশাখ হয়ে উঠেছে বর্ণিল উৎসব।
পাকিস্তানের সেনাশাসক আইয়ুব খানের আমলে যখন বাঙালির বাঙালিয়ানা নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করা হয়, তখন এই বর্ষবরণ উৎসব হয়ে উঠেছিল বাঙালির আত্মপরিচয় টিকিয়ে রাখার রাজনৈতিক হাতিয়ার। এই চেতনাই পরে বাংলাদেশকে জাতিরাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতার বন্দরে পৌঁছে দেয়।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশকে পরেও নানা সংকটে দিশা দেখিয়েছে পহেলা বৈশাখের উৎসব; সেই কারণেই এই দেশকে উল্টো পথে নেওয়ার চেষ্টায় বারবার আঘাত এসেছে এই উৎসবে। তার ধারাবাহিকতায় এবারও চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায় হামলার হুমকি দিয়ে চিরকুট এসেছে, যদিও তা আমলে নেওয়ার মতো নয় বলে আশ্বস্ত করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দুজনের শুভেচ্ছা বাণীতেই প্রত্যাশা সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগোনোর।