উত্তপ্ত এক দিন কাটালো ঢাকাবাসী। শনিবারে (১৫ এপ্রিল) ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৪০.০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন গরম এর আগে এসেছিল ৫৮ বছর আগে ১৯৬৫ সালে।
এছাড়া শনিবারসহ গত ১৪ দিন ধরেই চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা দেশের সবচেয়ে বেশি। সেখানে শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিও ওই এলাকার গত ৯ বছরের সবচেয়ে বেশি গরম।
একই অবস্থা অন্য অঞ্চলেও। সবখানেই তাপমাত্রার উর্ধগতি।
এরমধ্যে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। এসব এলাকায় বয়ে গেছে গরম বাতাসও।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চল দিয়ে যে বাতাস প্রবেশ করছে, তাতে কিছুটা জলীয় বাষ্প বয়ে আসছে। এতে বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ঘামও বেড়ে যাবে। আজ দিনের বাকি সময় গরম আরও বাড়তে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ বলেন, গরমের ওই তীব্রতা আগামী কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
অন্যদিকে আবহাওয়া পূর্বাভাসবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আক্কু ওয়েদারের হিসাবে, শনিবার বেলা তিনটায় ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গরমের তীব্রতা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো অনুভূত হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্দ্রতার পরিমাণও ছিল কম, মাত্র ১৮%। ফলে তীব্র গরম ও শুষ্ক বাতাস মিলেমিশে মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, আকাশে মেঘ না থাকায় এবং বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় এখনো গরমের তীব্রতা কমছে না। আগামী ২৪ ঘণ্টায় গরমের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মোস্তফা কামাল দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ দিয়ে থাকেন। তার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আজ ও আগামীকালের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, মদারীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, শরীয়তপুর, মাদারীপুরের তাপমাত্রা ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে।
অন্যদিকে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, মাগুরা, যশোর ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ওঠার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অন্য জেলাগুলোর তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অবশিষ্ট জেলাগুলোতে ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আগামী কয়েক দিন ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা আরও কিছুটা বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা বাড়বে। ফলে গরমের কষ্ট বাড়তে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার ও পর্যাপ্ত পানীয় পানের পরামর্শ দিয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল ঢাকার তাপমাত্রার পারদ একই উচ্চতায় উঠেছিল; অর্থাৎ ৪০.২ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। তারও আগে ১৯৬৫ সালে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছিল ১৯৬০ সালে, ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।