বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কক্সবাজারের প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেন্টমার্টিনের ৪ হাজার ৩০৩ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) বিভীষণ কান্তি দাশ ইংরেজি ভাষার সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন জানান, “দ্বীপের প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দা সেন্টমার্টিনের ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন।”
কক্সবাজার পৌরসভার সহকারী ট্যাক্স কালেক্টর নিরুপম শর্মা বলেন, “সমুদ্রপাড়ের সমিতি পাড়া থেকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মানুষ কক্সবাজার পৌর প্রিপারেটরি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।”
এখনো যারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি, তাদের নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, “আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাকিরাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসবেন বলে আশা করছি।”
কক্সবাজার পৌরসভার প্রস্তুতি নিয়ন্ত্রক হাবিবা খাতুন জানান, তারা টিনশেডের বাড়িতে থাকতে ভয় পাচ্ছেন, তাই আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন।
পানির নিচে চলে যাবে সেন্টমার্টিন
ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পানির নিচে চলে যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক বিজ্ঞানী ড. আব্দুল মান্নান।
তিনি অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টকে বলেন, “মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পানির নিচে চলে যাবে, এটা নিশ্চিত। তবে সেটা স্থায়ীভাবে নয়। পাঁচ থেকে সাত ফুট জলোচ্ছ্বাস হলে তো সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভেসে থাকার কথা নয়। শুধু জলোচ্ছ্বাস নয়, আজ থেকে আগামীকাল পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে ভরা জোয়ার আছে। সব ঘূর্ণিঝড় অমাবস্যা অথবা পূর্ণিমাতে আসে। অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে জোয়ারের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি হয়। সেন্টমার্টিনে আজ ভরা জোয়ার থাকবে এবং আগামীকাল কিছুটা কমবে। এবার সেন্টমার্টিনের জোয়ার কিন্তু পিক টাইমই ফলো করছে। মানে মোখা উপকূলে আসার সাথে সাথেই জলোচ্ছ্বাস শুরু হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই পিক টাইমে জোয়ারের ওপরের অংশেও জলোচ্ছ্বাস হয়। তাই জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস একসাথে হলে উচ্চতা বেশি হয়। অর্থাৎ সেন্টমার্টিনে আজ ৩.১ মিটার জোয়ার হবে অর্থাৎ ১০ ফুটের মতো। এর বাইরে জলোচ্ছ্বাস হবে আরও পাঁচ থেকে সাত ফুট উচ্চতার। সুতরাং জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাস মিলিয়ে ২০ থেকে ২২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর সেন্টমার্টিনে এ উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলে পুরো দ্বীপটি পানির নিচে তলিয়ে যাবে।”
এ আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, “তবে, ঘূর্ণিঝড় সেন্টমার্টিনের ওপর দিয়ে গেলেও দ্বীপটিতে কিছু সুবিধা আছে। কারণ, আমরা এখন পর্যন্ত যেভাবে দেখছি তাতে ঘূর্ণিঝড়ের বাম পাশে পড়ে যায় সেন্টমার্টিন। এছাড়া, সেন্টমার্টিনে তলিয়ে গেলেও কিন্তু পানি বের হয়ে যাবে। কারণ, চারপাশে খোলা বিচ। মানে একপাশে দিয়ে আসলেও আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে যাবে। এটা আবার স্থলভাগে হয় না।”
৩৩৩-এ মিলবে জরুরি তথ্য সহায়তা
জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ এ ডায়াল করে ঘূর্ণিঝড় মোকা এবং সতর্কতা সংকেত সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া আবহাওয়া বার্তা ও জরুরি সহায়তাও পাওয়া যাবে এই নম্বরে ডায়াল করে। অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট (এ২আই) শনিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।